ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

ঢেলা মাছের সফল কৃত্রিম পোনা উৎপাদন

প্রকাশনার সময়: ১২ জুলাই ২০২১, ২১:০৩

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বিলুপ্ত প্রায় ২৪টি দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদনের পর এবার ঢেলা মাছের পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছে।

চলমান করোনার মধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা বিলুপ্ত প্রায় টেংরা, গুলশা, পাবদা ও বৈরালীসহ ২৪টি দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনার পর ঢেলা মাছের পোনা উৎপাদনে দেশে প্রথমবারের মতো এই সাফল্য অর্জন করেন। ফলে পুষ্টিসমৃদ্ধ বিলুপ্ত প্রায় ঢেলা মাছ খুব শিগগিরই মাঠ পর্যায়ে চাষ করা হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষকদের মতে, এক সময় দেশের নদ-নদী ও হাওড় বিলে প্রচুর পরিমানে ঢেলা মাছ পাওয়া যেত। পরবর্তীতে জলবায়ু পরিবর্তন, অতিআহরণ ও জলাশয় সংকোচনের কারণে ঢেলা মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হয়ে যায় এবং এ মাছটি বিলু্িপ্তর তালিকায় চলে আসে। ফলে ঢেলা মাছ এখন প্রায় দুস্প্রাপ্য এবং উচ্চমূল্যে বাজারে বেচাকেনা হয়। ইনস্টিটিউট কর্তৃক কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় ঢেলা মাছকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এবং চাষের মাধ্যমে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্রে দু’বছর ধরে নিবিড় গবেষণায় কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে প্রথমবারের মত ঢেলা মাছের পোনা উৎপাদনের সফলতা অর্জন করে। গবেষক দলে ছিলেন কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এইচ এম কোহিনুর, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শাহা আলী, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিনা ইয়াসমিন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রবিউল আওয়াল।

স্থানীয় ব্রহ্মপুত্র নদসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ঢেলা মাছের পোনা সংগ্রহ করে কেন্দ্রের পুকুরে তা নিবিড়ভাবে প্রতিপালন করা হয়। এ সময় ঢেলা মাছের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে খাদ্যাভাস অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হয়। তাছাড়া, বছরব্যাপী জিএসআই ও হিস্টোলজি পরীক্ষণের মাধ্যমে ঢেলা মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করা হয়।

হিস্টোলজি পরীক্ষাকালে দেখা যায় যে, ঢেলা মাছের সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম হচ্ছে মে-জুন। ঢেলা মাছের ডিম ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে প্রতিগ্রামে ৭০০-৮০০টি। গবেষণাকালে দেখা যায় যে, একটি স্ত্রী ঢেলা মাছ প্রায় ৬-৮ গ্রাম ওজনের হলেই প্রজনন উপযোগী হয়। প্রজনন উপযোগী পুরুষ ঢেলা মাছ আকারে অপেক্ষকৃত ছোট (৪-৫ গ্রাম) হয়। প্রকৃতিতে স্ত্রী ঢেলা মাছের চেয়ে পুরুষ ঢেলা অপেক্ষাকৃত কম পাওয়া যায়। বিভিন্ন উৎস থেকে ঢেলা মাছ সংগ্রহকালে দেখা গেছে, প্রকৃতিতে স্ত্রী ও পুরুষ ঢেলা প্রাপ্তির অনুপাত হচ্ছে চারটি স্ত্রী ঢেলার সাথে মাত্র একটি পুরুষ ঢেলা থাকে।

তিনি জানান, গবেষণায় ১০ জোড়া ঢেলা মাছকে হরমোন প্রয়োগ করা হয়। হরমোন প্রয়োগের ০৮-০৯ ঘন্টা পর ডিম ছাড়ে এবং ২২ ঘন্টা পরে নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত পোনা বর্তমানে ইনস্টিটিউটের স্বাদুপানি কেন্দ্রের হ্যাচারীতে প্রতিপালন করা হচ্ছে।

ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন , ‘পুষ্টিসমৃদ্ধ ঢেলা মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কৌশল উদ্ভাবিত হওয়ায় মাঠ পর্যায়ে ঢেলা মাছের পোনা উৎপাদন ও প্রাপ্যতা সহজতর হবে এবং ঢেলা মাছকে সহজেই চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। অন্যান্য দেশীয় মাছের তুলনায় ঢেলা মাছে প্রচুর খনিজ পদার্থ আছে যা অন্যান্য দেশীয় মাছের তুলনায় অনেক বেশী। ভিটামিন এ শিশুদের রাতকানা রোগ থেকে রক্ষা করে, ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়তা করে। তাছাড়া জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি কর ‘।

ইনস্টিটিউটে বর্তমানে পিয়ালী, কাজলী, বাতাসি, কাকিলা, রাণী ও গাং টেংরাসহ আরো ১০টি মাছ নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশীয় মাছ সংরক্ষণসহ গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২০ সালে গৌরবজনক ‘একুশে পদক’ লাভ করে বলেও জানান মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।

নয়া শতাব্দী/এসইউ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ