মুক্তিযুদ্ধকালে জামালপুরে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ এর ডিগ্রি হোস্টেলে গড়ে উঠে এদেশের প্রথম আলবদর বাহিনী। শহরের বধ্যভূমি ডিগ্রি হোস্টেলে এক এক করে নারী-পুরুষদের ধরে নিয়ে আসে জামালপুরে প্রথম গঠন করা আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। সেই আলবদরদের বীভৎস অত্যাচারে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। আটক নারীদের ধর্ষণ করা হয়। সেই সাথে আটককৃত পুরুষদের লোহার সাঁড়াশি দিয়ে এক এক করে হাতের আঙুলের নখ তুলে ফেলে তারা। বাতাসে ভেসে আসে বন্দীদের আর্তচিৎকার। বীভৎস অত্যাচারের পর জবাই করে হত্যা করা হয় সবাইকে। পুরো ডিগ্রি হোস্টেল এর আশপাশে লাশের স্তূপে পরিণত হয়। গলিত অর্ধগলিত এসব লাশ ফেলে দেওয়া হয় আশপাশের জায়গায়। প্রায় ১০ হাজার এর বেশি নিরীহ মানুষদের জবাই ও অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয় এই ডিগ্রি হোস্টেলেই।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর ) রাতে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ ডিগ্রি হোস্টেলে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে নাট্যকার শাহীন রহমান এর রচনায় ও ফাহিম মালেক ইভান এর নির্দেশনায় নাটক ‘ডিগ্রি হোস্টেল’ নাটক মঞ্চায়িত করা হয়েছে। এই নাটকে মুক্তিযুদ্ধকালের আল বদরদের সেই সব বীভৎসতা তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ও নাট্যজন লিয়াকত আলী লাকীর ভাবনা ও পরিকল্পনায় দেশব্যাপী মঞ্চায়িত হচ্ছে ‘গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার’। তারই ধারাবাহিকতায় জামালপুরে ‘ডিগ্রি হোস্টেল ’ নাটক মঞ্চায়িত করা হয়।
ডিগ্রি হোস্টেল নাটক এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মির্জা আজম এমপি।
জামালপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি রেপার্টরী নাট্যদলের পরিবেশনায় ও জেলা কালচারাল অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মঞ্চায়ন করা হয় নাটক "ডিগ্রী হোস্টেল। নাটক মঞ্চায়নে সহযোগিতা করেন জামালপুর পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ছানু।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলহাজ্ব মির্জা আজম এমপি বলেন, ডিগ্রি হোস্টেল জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ এর সাথে জড়িত স্মৃতিময় একটি স্থান। কিন্তু আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে এই জায়গার অনেক স্মৃতি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই ডিগ্রি হোস্টেলে নিরীহ মানুষদের ওপর চালানো হতো অকথ্য নির্যাতন। সেই দুঃসহ স্মৃতি জামালপুরের অনেক পরিবার বহন করে চলেছে। শুধু জামালপুরেই নয় সারাদেশে অসংখ্য বধ্যভূমি রয়েছে। যেখানে অসংখ্য নির্যাতন হয়েছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাতে হবে। সঠিক ভবিষ্যৎ গড়তে সঠিক ইতিহাস জানা অত্যন্ত জরুরি। আগামীতে এই ডিগ্রি হোস্টেলকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এই ডিগ্রি হোস্টেল কে মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমি জাদুঘর তৈরির কাজ শুরু করা হবে। সবাই জানবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি অধ্যাপক তারিকুল ফেরদৌস।
এসময় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এর নেতৃবৃন্দ সহ জামালপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা হাজার হাজার দর্শক এই নাটকটির দর্শক সারিতে থেকে নাটক উপভোগ করেন।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ