দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের কিংবদন্তী বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবদীন হাজারী চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ফেনী শহরের মাষ্টারপাড়ার শৈলকুটিরের মুজিব উদ্যানে তাকে সমাহিত করা হয়।
এর আগে বিকাল ৫টায় ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তার নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠ। তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে ও জানাযায় অংশ নিতে দুপুরের পর থেকে ফেনীসহ আশপাশের জেলা থেকে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও ভক্ত-অনুসারীসহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লী পাইলট মাঠে জড়ো হতে থাকে।
জানাযা চলাকালে মাঠ ছাপিয়ে কলেজ রোড, পৌরসভা প্রাঙ্গণ, পুরাতন জেল রোড লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, ফেনী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জয়নাল হাজারীর চাচাতো ভাই মোশাররফ হোসেন মিয়া হাজারী, ভাগিনা সাখাওয়াত হোসেন লিটু হাজারী। জানাজায় ইমামতি করেন ফেনী জহিরিয়া মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি ইলিয়াস।
এর আগে সকাল ১০টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী স. ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, যুগ্ম-সম্পাদক বদিউল আলম, ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, ব্যাংকার জালাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী পাপ্পু, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাইফুদ্দিন নাসির ও খন্দকার তারেক রায়হান প্রমুখ অংশ নেন।
বর্ষিয়ান রাজনীতিক জয়নাল হাজারী আমৃত্যু আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৮৪ সালে প্রথম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হন। এ সময়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে ছিলেন।
ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি শুরু করা জয়নাল হাজারী ছাত্রাবস্থায় ফেনী কলেজে তৎকালীন ছাত্র মজলিশ (বর্তমান ছাত্র সংসদ) এর জিএস ছিলেন। এরপর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করেন শহরের মাষ্টারপাড়ার এ অধিবাসী। ২০০১ সালের ১৭ আগস্ট যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে তিনি দেশান্তরী হন। ওই বছর জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে তিনি হেরে যান। পরবর্তীতে দলীয় পদও হারাতে হয় তাকে। ২০০৯ সালে দেশে ফেরার পর আর হারানো পদ ফিরে পাননি। ২০১০ সালে ফেনী সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে তিনি উপজেলা কমান্ডার নির্বাচিত হন।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জয়নাল হাজারী রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। জয়নাল হাজারী হৃদযন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুস সংক্রমণে ভুগছিলেন। গত ১৫ ডিসেম্বর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ