ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিম চাষে লাভবান নান্দাইলের কৃষক 

প্রকাশনার সময়: ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫০

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চাষিরা শীতকালীন সবজি শিম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ সাফল্যের কারণে তারা দিন দিন ঝুঁকছেন শিম চাষে। ভালো ফলন এবং ভালো বাজার পেয়ে খুশি কৃষক পরিবার। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষাবাদ করছেন চাষিরা। উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ভরে গেছে শিমে। মাঠ ছেড়ে বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত শিমে শিমে ভরপুর। সবুজের উপর লাল-সাদা ফুলের সমারোহ। শিমের রাজত্বে যেন অন্য ফসলের খোঁজ মেলা ভার।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর নান্দাইলে ৪১৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার শিম দেশের বিভিন্ন স্থানে শিমের চাহিদা পূরণ করছে।

উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও এক পৌরসভার মধ্যে চরবেতাগৈর ইউনিয়নের প্রায় সব গ্রামেই শিমের চাষ হয়েছে। এছাড়া বীরবেতাগৈর, আচারগাঁও, খারুয়া, শেরপুর, রাজগাতি, সিংরইল ও গাঙ্গাইল ইউনিয়নে শিম চাষ হয়েছে। তাছাড়া বিক্ষিপ্তভাবে অন্যান্য ইউনিয়নেও শিম চাষ হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরশ্রীরামপুর, চরলক্ষিদিয়া, লক্ষিরচর, চরভেলামারী, মাইজপাড়া, চরকোমরভাঙ্গা, চরউত্তরবন্দ, চরকামট খালী, বীরবেতাগৈর ইউনিয়নের বীরকামট খালী, লোহিতপুর, লক্ষ্মীপুর, আচারগাঁও ইউনিয়নের গইছখালী, সুতারাটিয়া, রাজগাতি ইউনিয়নের সুন্দাইল, খারুয়া ইউনিয়নের হাটশিরা চরাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে শিমের আবাদ হয়েছে। এসব এলাকায় যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু শিম আর শিম। প্রতিটি শিম ক্ষেতে কৃষক-কৃষাণী, বৃদ্ধ এমনটি শিশুরাও শিম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

অণুকুল আবহাওয়ায় শিমের ভালো ফলন এবং বাজারেও উচ্চ মূল্য পাওয়ায় চাষিরাও বেশ খুশী। খরচের চেয়ে লাভ বেশী হওয়ায় কৃষক অন্য ফসলের চেয়ে শিম চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। শিম চাষের সঙ্গে জড়িত অন্তত উপজেলার দুশতাধিক কৃষক।

চলতি বছর কৃষকরা বারি১,২,৩ ৪, চল্লিশা, দেশী,বারি, নলডুক এবং স্থানীয় উন্নত জাতের শিম চাষ করেছেন। রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের উপজেলার ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এই অঞ্চলের শিম।

শিম চাষি হুমায়ুন, ফাইজ উদ্দিন, আহাদুল, মুনসুর,আবু তালেব রোকন উদ্দিন, মতিউর, গফুর, সোহাগ, ফকির, মুনসুরসহ বেশকিছু কৃষক শিম চাষ করে বদলে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য। এবছর শিমের বাজার বেশ ভালো। প্রথম দিকে কেজি প্রতি বাজার দর ৯০ থেকে ১০০ টাকা হলেও বর্তমানে শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একমন শিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে।এক একর জমিতে শিম চাষ করতে সবমিলিয়ে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। পুরো মৌসুমে কমপক্ষে এক একর জমি থেকে শিম বিক্রি হবে ৭৫থেকে ৮৫ হাজার টাকা।

লোহিতপুর গ্রামের হুমায়ুন জানান, (১৭ কাঠা) ১৭০ শতক জমি থেকে তিনি এখন পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। তিনি আরো ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন।একই গ্রামের ফাইজ উদ্দিন ৭০ শতক(৭কাঠা) জমি থেকে ৫০ হাজার শিমে বিক্রি করেছেন। শ্রীপুর গ্রামের গফুর ৭০ (৭ কাঠা) শতক জমি থেকে বিক্রি করেছেন ৪৫ হাজার টাকার শিম। লক্ষিরচর গ্রামের আহাদুল ১০০(১০ কাঠা) শতক জমি থেকে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নাদিয়া ফেরদৌসি বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সুষ্ঠু পরিচর্যায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার, কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, এই অঞ্চলের জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। লাভজনক হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা শীত মৌসুমে ব্যাপকভাবে শিম চাষ করে থাকেন। শিম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ