কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তার পাশে দোকানপাট, নগরায়ণ ও আবাসনে দ্রুত কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। পাশাপাশি জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বহু বছর ধরেই দেশে কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। তার প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে। সেই সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বাড়িঘর নির্মাণ, জলাভূমি ভরাট, রাস্তা-ঘাট নির্মাণ, দোকানপাট নির্মাণ, হাউজিং সোসাইটি, ইটভাঁটা, বনভূমি ধ্বংস করার প্রক্রিয়া চলছে। এভাবে চলতে থাকলে বসবাস উপযোগী পরিবেশই শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হবে না, নিকট-ভবিষ্যতে সমগ্র জনগোষ্ঠীই এক বিপর্যয়কর অবস্থায় গিয়ে পড়বে। এখনই মাথাপিছু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ অতি সামান্য। তারপরও যদি কৃষি জমি এমন দ্রুত হারে কমতে থাকে, তাহলে বিপুল জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দেয়া এক সময় কষ্টকর নয়, রীতিমতো অসম্ভব হয়ে পড়বে। ভূ-গর্ভের পানির স্তর অত্যধিক নিচে নেমে যাওয়ায় এখনই অনেক জায়গায় গভীর নলকূপে পানি ওঠে না। খাল-বিল, নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি ভূ-গর্ভে যেতেও পারছে না। দেশে মোট ভূমির ষাট শতাংশ কৃষি কাজে ব্যবহৃত হলেও প্রতিবছর এক শতাংশ হারে ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে।
এই ভূমি থেকে আমরা খাদ্য, বস্ত্র (তুলা), বৃক্ষ, বাসস্থান, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, শিল্প, খনি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মান সহ জীবন রক্ষাকারী ঔষধের উপাদান সমূহ পেয়ে থাকি। মূল্যবান এই ভূ-সম্পদ আজ নানা ভাবে মারাত্মক ভাবে অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। উপজেলায় বাড়ছে মানুষ, একই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের জীবন জীবিকার চাহিদা। চাহিদা ও প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে মানুষ ভূমির অপরিকল্পিত ও অপরিমিত ব্যবহার করছে। ফলশ্রতিতে ভূমির অপব্যবহার আজ উপজেলার সর্বত্র দৃশ্যমান হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা ভূমি অফিসের একটি সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬ সাল থেকে ৭০ সাল পর্যন্ত ভূমি জরিপ (রেকর্ড) যা ৭২ সালে চূড়ান্ত আর.এস খতিয়ান মতে হোসেনপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মোট আয়তন ১২১.২৯ বগ কি:মি:। মোট খতিয়ান-২৯৫৬৪ একর। মোট জমির পরিমান ২ হাজার ৮শ ৪০ একর। মোট কৃষি জমির পরিমান ১ হাজার ৮শ ১৮ একর। বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, চাতাল, ইটভাটা-৬টি, স্কূল-কলেজ -১৫০, রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, বিল, ডোবা, নদী, বাঁধসহ অন্যান্য অকৃষি জমির পরিমান ৬শ একর। স্বাধীনতার পর থেকে কৃষি জমিতে বাড়ি ঘর সহ বিভিন্ন অবকাঠামো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের ফলে ১শ একর কৃষি জমি জ্যামিতিক হারে কমেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো: ইমরুল কায়েস জানান, উপজেলায় কৃষি জমি হ্রাস রোধ করতে না পারলে কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসবে। কৃষি জমি হ্রাস রোধ করতে না পারলে কৃষি উৎপাদন কমিয়ে উপজেলার খাদ্য ঘাটতি চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরো জানান, অপরিকল্পিত ঘরবাড়ি, অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করা জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা ও গণআন্দোলনের। কালবিলম্ব না করে কৃষি জমি সংরক্ষণে জরুরি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কৃষি জমি রক্ষার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করা হোক। জীব বৈচিত্র বেঁচে থাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন না ঘটে, এজন্য হোসেনপুর উপজেলার সমাজ ও পরিবেশ সচেতন মহল জোর দাবি জানান।
এ ব্যাপারে হোসেনপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, বাসাবাড়ি নির্মাণের জন্য ভূমি অফিসের অনুমতি জরুরি। তবে অনেকেই মানছে না বিধায় এই সংকট দেখা দিচ্ছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ