কাবেল উদ্দিন আহমেদ, বয়স ৯৫। বৃদ্ধ বয়সে পারছেন না হাটতে এমনকি ভাল করে কথাও বলতে পারছেন না। তার ইচ্ছে তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। ছেলে আবুল কাশেমকে তার ইচ্ছের কথা বললে তার ছেলে কোলে করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে যান এবং ভোট প্রয়োগ করতে সহযোগীতা করেন।
অন্যদিকে আরেক বৃদ্ধ ফজর আলী (৮০), তিনি কথা ও হাঁটাহাটি করতে পারছেন না। তবে তার ইচ্ছে জীবনের শেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে চান। তাই তার মনের আশা পূরণ করতে নাতি নাসিম উদ্দিনের কোলে করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসেন।
এদিকে কনকনে শীতে দুই বৃদ্ধ ছেলে ও নাতির কোলে চড়ে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসতে দেখে ভোট কেন্দ্রে মানুষের সমাগম বৃদ্ধি পায়। অনেককে ওই দুই বৃদ্ধর সঙ্গে ছবি তুলতে দেখা গেছে।
আজ রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে জেলার বোদা উপজেলাধীন চন্দনবাড়ি ইউনিয়নের চন্দরবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে কাবেল ও ফজর আলীকে কোলে করে ভোট দিতে আসার চিত্র দেখা যায়৷
জানা গেছে, কাবেল উদ্দিন ও ফজর আলী ওই ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এবিষয়ে কথা হয় কাবেল উদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেমের সাথে। তিনি বলেন, “আমার বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি আর হাটতে পারে না এমনকি কথাও বলতে পারে না তেমন। তিনি আমাকে তার ইচ্ছের কথা জানান, তিনি ভোট দিতে চান৷ তাই আমি আমার বাবার ইচ্ছে পূরণ করতে কোলে তুলে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। তিনি ভোট দিয়ে কেদে ফেলেছেন। তিনি বললেন, তার পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে পেরেছেন।”
একই কথা বলেন বৃদ্ধ ফজর আলীর ছেলে নাসিম আলী। তিনি বলেন, ‘আমার দাদা আমাকে বলেন তিনি জীবনের শেষ বারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট দিতে চান। তাই আমি আমার দাদার আশা পূরণ করতে তাকে নিয়ে কেন্দ্রে আসছি। দাদা ভোট দিতে পারলো এতে আমিও অনেক খুশি।’
এবিষয়ে বৃদ্ধ কাবেল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ভোট দিয়েছি আমার পছন্দের মানুষকে। ভোট দিতে পেরেছি এতে অনেক ভাল লাগছে।’
এদিকে বোদা উপজেলার চন্দরবাড়ি ইউনিয়নের চন্দরবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং অফিসার জিয়াউর রহমান বলেন, সকাল সকাল কাবেল নামে এক বৃদ্ধ তার ছেলের কোলে এবং ফজর আলী নামে আরেক বৃদ্ধ তার নাতির কোলে করে ভোট কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসেন। আমি ও আমার পুরো টিম তাদের দুইজনের ভোট প্রদানের জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা করেছি এবং তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করেছি৷
আজ রোববার সকাল ৮ টা থেকে জেলার বোদা ও আটোয়ারী দুই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মোট ৯০টি কেন্দ্রে ব্যালটের মাধ্যমে বিরতিহীন ভাবে চতুর্থ ধাপ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে কনকনে শীত থাকার কারনে ভোট কেন্দ্রেগুলোতে সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এদিকে সুষ্ঠু ভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও আনসারবাহিনীসহ চার স্তরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে৷
পাশাপাশি নির্বাচন অফিস জানায়, মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৫৭জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৮৩ হাজার ৭শ ৩৩জন ও মহিলা সংখ্যা ৮২ হাজার ২শ ২৪ জন। মোট চেয়ারম্যান ৩১ জন, সংরক্ষিত মহিলা ওর্য়াডে প্রার্থী ১২৫ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ৪২৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ