মেহেরপুরে রেল লাইন নির্মাণের শুরু হয়েছে নকশা প্রণয়নের কাজ। আগামী ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে নকশার কাজ শেষ হলে একনেকের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মো: আরিফুল ইসলাম। সেখানে প্রকল্প পাশ হলেই শুরু হবে রেল লাইন স্থাপনের কাজ। আর এ সম্ভাব্যতা যাচায়েই ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি টাকার উপর।
আর্থ সমাজিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেকখানি পিছিয়ে মেহেরপুর জেলা। জেলায় নেই কোন শিল্প কলকারখানা। শধু মাত্র কৃষির উপর নির্ভরশীল এখানকার মানুষ। এ জেলার উৎপাদিত পণ্য রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে। ফলে সঠিক সময়ে বাজার ধরতে পারেন না কৃষকেরা। ক্ষতিগ্রস্থ হয় জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা বানিজ্যে গতি আনতে ও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সহজেই বাজারজাত করতে জেলাকে রেলপথের সাথে যুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের। দাবি পূরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল লাইন নির্মাণের ঘোষণা দেন। তারপর থেকেই রেল লাইনের স্বপ্ন দেখতে থাকেন জেলার মানুষ। শুরু হয় চিঠি চালাচালি।
অবশেষে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ চুক্তি হয় প্রকল্পের। তবে করোনার কারণে স্থবির হয়ে পড়ে প্রকল্পের অগ্রগতি। প্রকল্প পরিচালক জানান, কোভিডের কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যেমন দেরি হয়। শুরু করেও কাজে বিঘ্ন ঘটে। তারপরও চলমান রাখা হয় প্রকল্পের কাজ।
এ প্রকল্পের পিডি আরিফুল ইসলাম জানান, কোভিড পরিস্থিতি বারবার বাধা সৃষ্টি করে প্রথম পর্যায়ের কাজে। ইতোমধ্যে কাজের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা থেকে মুজিবনগর হয়ে মেহেরপুর শহর পর্যন্ত স্থাপন করা হবে রেল লাইন। যার দৈর্ঘ হবে ৩৫.৮ কি. মি.। রেল যোগাযোগের সাথে মেহেরপুরকে যুক্ত করতে মোট লাইন স্থাপন করতে হবে ৫৭ কি. মি.। স্টেশন হবে ৬ টি। নকশার কাজ চলছে। সব ঠিক থাকলে এ অর্থবছরের শেষের দিকে তোলা হবে একনেকে। বাজেট পাশ হলেই মেহেরপুরে শুরু হবে রেল লাইনের কাজ।
সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক লাবলু জানান, এ জেলায় প্রচুর পরিমান সবজি উৎপাদন হয়। এ সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রায় প্রতিদিন ট্রাকযোগে এসব পণ্য সরবরাহ করা হয়। মাঝে মধ্যেই রাস্তার যানজটে পড়ে সময়মত পৌঁছায়না এসব পণ্য। ফলে লোকসানে পড়তে হয় এখানকার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।
অথচ যশোর অঞ্চলের কৃষকেরা রেল লাইন থাকার কারণে কম খরচে সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারেন তাদের উৎপাদিত পণ্য। জেলায় দ্রুত রেল লাইনের কাজ সম্পন্ন হলে গতি আসবে কৃষিখাতে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের আমচাষি সাখাওয়াত হোসেন জানান, এ জেলা আম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এখানকার উৎপাদিত আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপেও রপ্তানি করা হয়। অথচ পরিবহন ব্যবস্থার দূর্বলতার কারণে মাঝে মধ্যেই তাদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়। রেললাইন থাকার কারণে চাপাইনবাবগঞ্জ ও নওগা জেলার কৃষকরা কম সময়ে, কম খরচে তাদের উৎপাদিত আম দেশের বড় বড় জেলায় সরবরাহ করতে পারেন। ফলে লাভবানও হন তারা।
বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মনিরুজ্জামান দিপু জানান, দ্রুত রেল লাইন স্থাপন হলে শুধু কৃষি ক্ষেত্রে নয় জেলার ব্যবসা বানিজ্যেও গতি আসবে। শুধু আশ্বাস নয় দ্রুত এ কাজের বাস্তবায়ন চান তারা। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন জানান, নকশার কাজ শেষ হলেই প্রকল্পটি একনেকে পাশ হবে দ্রুত। তারপরই শুরু করা হবে রেল লাইনের কাজ। কাজটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় সে লক্ষ্যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ