ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবোঝাই চার চাকার হিউম্যান হলার নিয়ে ছুটছেন অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকরা। সংখ্যায় কম হলেও কোনরকম তাদের ওস্তাতদের (চালকের) কাছ থেকে শিখে কোন প্রকার লাইসেন্স ছাড়াই তারা বসছে চালকের আসনে।
নেই কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ। অদক্ষ হাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব চালকদের বিরুদ্ধে হাইওয়ে পুলিশ মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করলেও বিশেষজ্ঞরা এজন্য বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের উদাসীনতার পাশাপাশি দুষছেন গাড়ি মালিকদের।
তবে মালিকদের ভাষ্য, প্রচুর চালক সংকটের কারণে কেউ কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিতে বাধ্য হন। এক্ষেত্রে চালক সংগঠনের কর্তৃত্বের কাছে মালিকরা অসহায় বলে অভিযোগ করেছে একাধিক মালিক সমিতি।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা বন্ধ করে দেয়ার পর লক্কর, ঝক্কর পুরনো গাড়ি দিয়ে বারইয়ারহাট-বড়দারোগাহাট ও সীতাকুণ্ড রুটে লেগুনা ও সেইফ লাইন নামে শত শত গাড়ি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় চালক নেই। তাই গাড়ি মালিকরা বাধ্য হয়ে অদক্ষ, শিশু কিশোরদের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিচ্ছেন।
ঝুঁকি নিয়ে কেন কিশোর চালকের গাড়িতে উঠেছেন জানতে চাইলে যাত্রী ইরফান মিয়া বলেন, গাড়িতে ওঠার সময় চালকের দিকে তাকাননি। সামনে পেয়েছেন, তাই গাড়িতে উঠে পড়েছেন।
অপর যাত্রী মিজান বলেন, এই রুটে ১৩-১৪ বছর বয়সী অনেক চালক আছে। যানবাহনের সংকটের কারণে ঝুঁকি আছে জেনেও তাঁরা এসব গাড়িতে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন।
বারইয়ারহাটের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, সড়কে লেগুনা-সেইফ লাইন পরিবহনের অনেক চালক কিশোর। তারা এখনো অদক্ষ ও অপরিপক্ক। তারা অনেক দ্রুত বেগে গাড়ি চালায়। সড়কে দাঁড়ানো যাত্রী তুলতে হঠাৎ ব্রেক দেয়। এতে অনেক যাত্রীর সমস্যা হয়। এছাড়া অনেক সময় গাড়ি খালি থাকলে উল্টো পথের যাত্রী নিতে এদিক ওদিক না তাকিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়। এসময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। লাইসেন্স ছাড়া কোন চালককে গাড়ি চালাতে না দেয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
উপজেলার ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা গাড়ির যাত্রী মনোয়ার হোসেন বলেন, ভালমতো গোঁফও উঠেনি এমন কিশোররা রাস্তায় গাড়ি চালায়। এতো বেপরোয়াভাবে তারা গাড়ি চালায় যে যাত্রীরা সাবধান করলেও তারা কানে তোলে না। মহাসড়কে হাজার হাজার গাড়ি দ্রুতগতিতে প্রতিদিন চলাচল করছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকরা বয়সসুলভ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকে।
বিকাশ ভৌমিক নামে এক যাত্রী বলেন, মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালান অনেক চালক। এটিও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন চালককে এ নিয়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে দেখিনি।
লাইসেন্সপ্রাপ্ত একাধিক চালক অভিযোগ করে বলেন, কিশোর বয়সী চালকরা মালিকদেরকে দৈনিক জমার টাকা বেশি দেয় বলে মালিকরা তাদেরকেই গাড়ি দিয়ে থাকে। তাদের কারণে আমাদের বেকার থাকতে হচ্ছে। লোভী মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান লাইসেন্সি চালকেরা।
সীতাকুণ্ড-বারইয়ারহাট রুটে চলাচল করা সেইফ লাইন ও হিউম্যান হলারের একাধিক মালিক জানান, আমরা বরাবরই অপ্রাপ্তবয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের দিয়ে গাড়ি চালানোর বিরোধী। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাপট এতো বেশি যে তাদের সাথে পেরে ওঠা যায় না। পুলিশের সঙ্গে এসব শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের রয়েছে দহরম মহরম।
পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব শ্রমিক নেতারা এমনই শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন, তাদের কাছে মালিকরা এক রকম জিম্মি হয়ে আছে।
সেইফ লাইনের মালিক মোঃ সোলেমান বলেন, অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে গাড়ি চালানোর পক্ষে নন তিনি। তবে সমস্যা হচ্ছে, লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া এই পেশার প্রবণতা হচ্ছে, হেলপাররাই পরবর্তীতে চালক হয়ে আসেন। চালকদের হাত ধরে হেলপাররা গাড়ি চালানো শেখে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালকের সংকটের সুযোগে হেলপাররাই গাড়ি চালায়। অন্যদিকে, মালিকদের সামনে বিকল্প না থাকায় তারাও তাদেরকে গাড়ি দিয়ে দেয়।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ একেএম শরফুদ্দীন নিজামী বলেন, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করছে হাইওয়ে পুলিশ। কিশোর চালকদের হাতে গাড়ি না দিতে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছেন। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভা করেও সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ