সমতল ভূমিতে কমলার চাষ করে রীতিমত তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দুই ভাই। কমলার চাষ যে শুধু পাহাড়ি অঞ্চলেই হয় এমন ধারণা পাল্টে দিয়ে এখন সমতল ভূমিতে কমলার চাষ করে বাণিজ্যিক ভাবে সফল হয়েছেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামের দুই সহোদর স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম ও ব্যাংকার আব্দুর রউফ। শখের বশে করা কমলার বাগান এখন বাণিজ্যিক ভাবে রূপ নিতে যাচ্ছে।
জানা যায়, শখের বশে প্রথমে তারা কমলার চাষ শুরু করেন। পরে যখন দেখলেন তাদের লাগানো কমলা গাছে সুন্দর কমলা ধরেছে তখন তারা চিন্তা করলেন বাণিজ্যিক ভাবে কমলা চাষের। পরে ২০১৫ সালের শেষ দিকে এক একর জমির উপর ১০১ টি ম্যারিন্ডা জাতের কমলার চারা তারা রোপণ করেন। তারপর থেকেই তারা সফলতা অর্জন করতে থাকেন। ২০২০ সালে তাদের বাগানে প্রথম প্রতিটি গাছে প্রায় ৫০ কেজি করে কমলা ধরে। কমলার স্বাদ যেমন ভালো ছিল আকারেও তেমন বেশ বড় ছিল।
চলতি বছর ২০২১ সালেও তাদের বাগানে প্রচুর কমলা ধরেছে। তবে সঠিক পরিচর্যা না হওয়ার কারণে এবছর কমলা ধরার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তবে এবারের কমলার স্বাদ গত বছরের চেয়েও বেশি মিষ্টি।
সরেজমিন স্বপ্নচূড়া নার্সারি অ্যান্ড ট্যুরিজমে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কমলা গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রঙিন কমলা। কমলার বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিড় করছে দর্শনার্থীরা। রঙিন কমলার সাথে আবার কেউ কেউ সেলফি তুলছেন। অনেকেই আবার এসেছেন সপরিবারে। তবে স্থানীয় কৃষকরা এই বাগান দেখে বেশ উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন কমলা চাষে। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকেরা এখান থেকে কমলার চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাগান করার জন্য।
কালুখালী থেকে আসা কৃষক কামাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি এখানে কমলার বাগান আছে। তাই দেখতে এসেছি। নিজের চোখে কমলার এত সুন্দর বাগান দেখে আমার মনটা ভরে গেছে। আমিও চেষ্টা করবো একটি কমলার এমন বাগান করার। এখান থেকেই চারা কিনে নিয়ে যাব এবং এদের পরামর্শ অনুযায়ী বাগানের পরিচর্যা করবো।
দর্শনার্থী জিনাত আরা বলেন, গত বছর শুনেছিলাম এখানে বিশাল একটি কমলার বাগান তৈরি হয়েছে। গত বছর এসে কমলা দেখতে পাইনি। শেষের দিকে এসেছিলাম। তাই এবার শুরুতেই সন্তানদেরকে নিয়ে চলে এসেছি। থোকায় থোকায় কমলা ধরা দেখে ওরা খুবই আনন্দিত হয়েছে। বেশ মজাও পাচ্ছে। নিজ হাতে কমলা ছিড়ে খেয়ে দেখলাম। সমতল ভূমির কমলা হিসাবে বেশ সুস্বাদু।
বাগানের মালিক স্কুল শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, প্রথমে শখের বশে কমলার চারা রোপণ করি। পরে এটিতে সফলতা পাওয়ায় এখন বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করেছি। ইচ্ছা আছে এই অঞ্চলে ভালো জাতের কমলার চারা ছড়িয়ে দিব। সেভাবেই কাজ করছি। আমাদের এখানে অনেক উন্নত জাতের বিভিন্ন ফল ও ফুলের চারা পাওয়া যায়।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে ফল চাষে বাংলাদেশ চতুর্থ অবস্থানে আছে। তো এই অবস্থানকে অগ্রগতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ব্যাপক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বালিয়াকান্দির দুই ভাই কমলা চাষে সফল হয়েছেন এবং তাদের দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। আমরা সারাক্ষণই তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ