শীত এলেই ব্যাপক হারে জমে উঠে চুয়াডাঙ্গা জেলার ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজারের খেজুর গুড়ের হাট। প্রতিবছর এ সময় ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে গুড়ের ভাঁড় নিয়ে হাজির হয় গুড় উৎপাদনকারীরা। তবে খেজুর গাছ কমে যাওয়ার ফলে রস আরোহণও কম হচ্ছে। এতে গুড়ের হাট তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। যার কারণে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর খেজুর গুড়ের দাম বেড়েছে।
এই হাট থেকে প্রতি শুক্রবার ও সোমবার ২০ থেকে ৩০ ট্রাক খেজুরগুড় দেশের বিভিন্ন জেলায় রফতানি করা হয়ে থাকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে চলে আসছে। শীতের তিন মাস এ হাটটি বেশ জমজমাট থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা যেমন- ঢাকার সাভার, বরিশাল, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ বেশ কয়েক জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই হাটে এসে খেজুর গুড় কিনে নিয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন সরোজগঞ্জে খেজুর গুড়ের হাট বসে। এ বছর খেজুর গুড় ১৫০-১৭০ ও পাটালি ১৯০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর তুলনায় কেজি দরে বড়েছে।
এলাকার কয়েকজন গুড় বিক্রেতা জানান, খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করা খুব কষ্টের কাজ। এ জন্য অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে খেজুর গাছ কেটে ফেলার কারণে গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। ফলে গাছিরা রসের অভাবে গুড় তৈরি করতে পারছে না। এ কারণে গুড়ের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
গুড় কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছরে খেজুর গুড়ের দাম বেশি। হাটে আমদানি কম হওয়ায় গুড়ের দাম বেড়েছে।
কুমিল্লা থেকে আসা পাইকারি গুড় ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন প্রতিনিবেদককে জানান, চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় পাইকারি কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। গুড়ের মান ভালো হওয়ায় প্রতি হাটে ২ থেকে ৪ ট্রাক গুড় ক্রয় করেন। তবে গতবারের চেয়ে এবার দাম বেড়েছে।
গুড় উৎপাদনকারীদের দাবি, অনেক খেজুর গাছ কেটে জ্বালানী কাজে ব্যবহার করা হয়। যার কারণে চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট অচিরেই বিলীন হতে চলেছে। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উচিত গাছ না কেটে গাছীদের সচেতন করা। যাতে গাছীরা রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী গুড়ের হাট ধরে রাখতে পারে।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ