ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ি গ্রামের চাষি মো. তাজউদ্দিন। এই মৌসুমে করতেন ধান চাষ। তাতে খরচ উঠলেও লাভের মুখ খুব একটা দেখছিলেন না। তাই দুই বছর ধরে আমন ছেড়ে আখ চাষ করছেন ৬ বিঘা জমিতে। এখন খরচ বাদ দিয়ে এক মৌসুমেই প্রায় ৪ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে তাঁর।
লাভ ভালো হওয়ায় তাজউদ্দিনের মতো মল্লিকবাড়ি গ্রামের মফিজুল, আব্দুল বাতেন, চারপুর সিতারচর গ্রামের মুর্শিদ আলম, সাতু মিয়াসহ আরও অনেক চাষি এখন আখ চাষে ঝুঁকছেন। উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের হিসাবে, পুরো উপজেলায় এখন আখচাষি ১০০ জনের বেশি। পাঁচ বছর আগেও এই সংখ্যা ছিল ২০ থেকে ৩০ জন।
ভালুকা উপজেলার মাটি আখ চাষের উপযোগী হওয়ায় স্থানীয়ভাবে পরিচিত অমৃত, সুন্দরী, রংবিলাশ, বিএসআরআই ৪১/৪২ জাতের আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তারা।
কয়েকজন কৃষক গত কয়েক বছর থেকে আখ চাষ করে এখন তারা স্বাবলম্বী। রোগ বালাইয়ে তেমন একটা ক্ষতি না হলে এক একরে আড়াই লক্ষাধিক টাকার আখ বিক্রয় করা যায়। উৎপাদন খরচ ৫০-৬০ হাজার টাকা বাদে একরে ২ লাখের বেশি টাকা লাভ হয়। এজন্য প্রতি বছর কৃষকদের আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
মল্লিক বাড়ি গ্রামের কৃষক তাজউদ্দিন জানান, লাভজনক ফসল হলেও আখ অনেক চাষি অধিক আখ চাষের সাহস করেন না। কারণ হিসেবে তাদের কাছ থেকে জানা যায়, বাণিজ্যিকভাবে চিনিকলগুলো এ জাতের আখ কেনে না। শুধু মুখে চিবিয়ে কিংবা রস করে খাওয়া হয়। চিনিকলগুলোতে কেনা হলে কৃষকরা আখ চাষে আরও অনেক লাভবান হতেন। তবে তিনি এবার ৬ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন। এতে তার খরচ হয়েছে ২ লাখ টাকা। তিনি আশা করছেন ৬ লাখ টাকার আখ বিক্রি করতে পারবেন।
একই গ্রামের কৃষক মফিজুল জানান, গত ৩ বছর ধরে তিনি আখ চাষ করছেন। এবার ২৫ কাঠা জমিতে আখ চাষে তার দেড় লাখ খরচ হয়েছে। ৪ লাখ টাকার আখ বিক্রির আশা করছেন তিনি।
আখ চাষি আব্দুল বাতেন বলেন , আখ লাভজনক ফসল। যুব সমাজ যদি এ পেশায় আগ্রহী হলে বেকারত্ব কমে আসবে। তিনি জানান, স্থানীয় পাইকাররা তাদের ক্ষেত থেকে আখ ক্রয় করে নিয়ে যায়। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবারে তেমন একটা রোগ বালাই দেখা দেয়নি। দামও ভালো আছে।
চানপুর গ্রামের মুর্শিদ আলম ১৮ কাঠা জমিতে আখ চাষ করেছেন। এতে তার প্রায় ১ লাখ টাকার অধিক খরচ হয়েছে। তিনি জানান, ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এতে তিনি আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হবেন।
স্থানীয় পাইকার আব্দুল মান্নান বলেন, তার মতো আরও অনেক পাইকার রয়েছেন। তারা চাষীদের আখ ক্ষেত পাইকারী দরে ক্রয় করে আস্তে আস্তে ক্ষেত থেকে কেটে নিয়ে যান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন জাহান জানান, আখ চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটি অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ার স্থানীয় কৃষকরা এ চাষে অধিক মনোযোগী হয়েছেন। বর্তমানে ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে ৯২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ফলন আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ