ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, সেতুর গতি পথের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণে বিদ্যুৎ বিভাগের গড়িমসি এবং সেতুপথে দরকারি রেলওয়ের জমির জটিলতা দূর না হওয়ায় খুলনার বহু প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজে ধীর গতি তৈরি হয়েছে। ফলে খুলনাবাসীর দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ভৈরব সেতুটির নির্মাণে আবারও ধীরগতি দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
দিঘলিয়ার গণ মানুষের মাঝে ইতোমধ্যে দেখা দিচ্ছে ভৈরব সেতুর বাস্তবায়ন কাজ নিয়ে নানা সংশয় নানা জিজ্ঞাসা। তবে দ্রুত ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) অধিগ্রহণকৃত ভূমির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য লে-আউটকৃত ভৈরব সেতু এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পৃথক ২টি প্রতিনিধি দল।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মারুফুল আলম এ প্রতিবেদককে জানান, আগামী দেড়/দুই মাসের মধ্যে ভৈরব সেতুর জমি অধিগ্রহণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আশা নিয়ে কাজ চলছে।’ এদিকে ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজে দ্রুত গতি আনার লক্ষ্যে একই দিন দিঘলিয়ার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে খুলনা সড়কের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ ভৈরব সেতুর কনসালটেন্ট টিম লিডার এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।
সড়ক ও জনপথ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লি: (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায়। প্রথম অবস্থায় ছাড়পত্র সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা পাঠাতে বিলম্ব করে। পরবর্তীতে সকল দপ্তরের ছাড়পত্র (এনওসি) পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৪ মে সেতুর পূর্ব সাইট দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাবের সামনে সরকারি খাস জমিতে ( ঈদগাহের মধ্যে) সেতুর ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজের মধ্য দিয়ে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এরপর একই স্থানে ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে সেতুর পূর্ব সাইট ভৈরব নদীর তীর সংলগ্ন সরকারি খাস জমির উপর ১৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়। দীর্ঘ কয়েক মাস বিগত হলেও ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজের জন্য বড় বাঁধা উত্তরণ সম্ভব হয়নি।
ভৈরব সেতুর জন্য দিঘলিয়া, মহেশ্বরপাশা এবং দেবনগর মৌজার মোট ১৭ দশমিক ৪৯ একর (৭ দশমিক ০৮ হেক্টর) ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। এর মধ্যে সেতুর পশ্চিম পাশ অর্থাৎ নগরীর কুলি বাগান থেকে রেলিগেট পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭ দশমিক ১১৩৬ একর (২ দশমিক ৮৮ হেক্টর) ভূমি রয়েছে। সেতুর উভয় পাশের উক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে গত মাসে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য ২টি সংশোধিত প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সার্ভেয়ার টিম সেতুর উভয় পাশের লেআউট কৃত জমির পরিমাপ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রিপোর্ট পেশ করে।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) অধিগ্রহণকৃত ভূমির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. মারুফুল আলম এবং সেতু বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদের নেতৃত্ব পৃথক ২টি প্রতিনিধিদল যৌথভাবে লে-আউটকৃত ভৈরব সেতুর উভয় পার্শ্বের জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুল আলম, ভৈরব সেতুর সুপারভিশন কনসালটেন্ট কমলেন্দু মজুমদার, সেতুর কনসালটেন্ট রিবি টিম লিডার রইসউদ্দিন মির্জা ও বেনজীর আহন্মেদ, সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রেজা, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডক্টর মসিউর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এমএ রিয়াজ কচি ও মো. হাফিজুর রহমান, ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লি: (করিম গ্রুপ) এর ডিপিএম ইঞ্জিনিয়ার মো. মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. মোতালেব হোসেন, সওজ অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মো. নাইমুল ইসলাম প্রমুখ।
জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এরমধ্যে নদীর পশ্চিমপাশ অর্থাৎ নগরীর কুলিবাগান থেকে রেলগেট ফেরিঘাট সংলগ্ন নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার বসবে। এই অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নাগরীর কুলিবাগান আকাঙ্ক্ষা পাট গোডাউনের কর্নারে। ৫ এবং ৬ নং পিলারের মাঝখান দিয়ে রেললাইন ক্রস করবে। এরপর ৭ এবং ৮ নং পিলার বসবে। ৯ থেকে ১৩ নং এই ৫ টি পিলার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লি: এর অভ্যন্তরে। এর ফলে রপ্তানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা পড়বে। ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে ভৈরব নদীর পূর্বপাশ অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগরঘাট বানিয়াঘাট ফেরী সংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কুকুরমারা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতুর নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা। সেতুটির নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলেছিলেন ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ চলবে। পাশাপাশি সেতুর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের কাজও চলবে।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ