খুলনা মহানগরে এলপি গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা চলছে। খোলা বাজারের মত পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে, মুদি-মনোহারি দোকানে অবাধেই বিক্রি হচ্ছে এসব জ্বালানি। যা কেনাবেচায় লাগছেনা কোনো অনুমোদন। এতে করে দুর্ঘটনার আশংকা বাড়ছে।
এদিকে, এ বিষয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে কোনো রকম নড়েচড়ে বসলেও অধিকাংশ সময় তাদের নজরদারি চোখে পড়ে না।
বিস্ফোরক অধিদপ্তর খুলনার সূত্র জানান, খুলনা জেলায় বিস্ফোরক লাইসেন্স গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৫০ এবং লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন ১৫০ এর মতো। তবে লাইসেন্স গ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানের বাইরে সম্প্রতি নগরীতে অনুমোদনহীন গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগ বেশি থাকলেও লাভের অঙ্কটা বেশ, তাই লাইসেন্স বা অনুমোদন ছাড়াই দৌড়-ঝাপ করে অনেকেই নেমে পড়েছে এলপি গ্যাসের ব্যবসায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর সোনাডাঙ্গা, গল্লামারী, নিরালা, জোড়াগেট সিএনবি কলোনি, রূপসা, বয়রা, বাস্তুহারা, বৈকালি, খালিশপুর, দৌলতপুর, মানিকতলা, ফুলবাড়ীগেট, শিরোমণি, আটরা, ফুলতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মুদি দোকান, ফ্লাক্সিলোডের দোকান, ফটোকপির দোকান, চায়ের দোকানসহ পাড়া-মহল্লার হাটে বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এলপি গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার বিক্রির মহোৎসব। একই সাথে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পেট্রোল পাম্প থাকলেও বিভিন্ন সড়কের মোড়ে বা নির্দিষ্ট দোকানে এক লিটার কিংবা আধা লিটারের প্লাস্টিকের বোতলে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পেট্রোল বা ডিজেল। যে কেউ ইচ্ছা করলেই সেগুলো কিনতে পারছেন। হাতের নাগালে এমন দাহ্য পদার্থ পাওয়াতে বাড়ছে অপরাধ প্রবণতাও।
এই সূত্র আরও জানান, খুলনা জেলায় বিস্ফোরক লাইসেন্স গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬৫০ এবং লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন ১৫০ টির মতো। খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে একজন বিক্রেতা সর্বোচ্চ ১০টি পর্যন্ত এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার এবং পেট্রোল বা ডিজেল বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২ হাজার লিটার পর্যন্ত মুজদ করতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে।
সূত্র মতে, সরকারি বিধি মোতাবেক গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল, মবিল বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী এই শর্তগুলো পূরণ করলেই কেবল পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার ও পেট্রোল বিক্রির জন্য বিস্ফোরক লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, নো অবজেকশন সার্টিফিকেট, টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অদৃশ্য।
খুলনা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের পরিদর্শক রিফাত-ই-আশরাফ জানান, দপ্তরে জনবল সংকটসহ পরিবহন সংকট রয়েছে। এত বড় বিভাগ দেখভালের জন্য কর্মকর্তা কর্মচারী সংখ্যা মাত্র ৭জন। প্রতিনিয়তই আমরা মনিটরিং করি। তবে পরিবহন ব্যবস্থা সংকট থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরের মধ্যে মনিটরিং যথাযথ হয়ে ওঠে না।
গ্যাস কোম্পানির ব্যাপারে তিনি বলেন, নির্ধারিত গ্যাস কোম্পানিগুলো তাদের সেলস্ বাড়ানো জন্য যে কোনো দোকানে গ্যাস সরবরাহ করে। তবে গ্যাস সরবরাহের আগে বিস্ফোরক লাইসেন্স আছে কিনা দেখে নেয়া উচিত। তবে বিনা লাইসেন্সে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বা দাহ্য পদার্থ বিক্রি না করতে পারে তার জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে।
খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স’র লাইসেন্স পরিদর্শক নাজমুল হুদা বলেন, দাহ্য পদার্থ, গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা, পেট্রোল ডিজেলের ব্যবসার ক্ষেত্রে অবশ্যই ফায়ার লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। রাস্তার পাশে সাজিয়ে রেখে এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা খুবই বিপজ্জনক। এছাড়া যত্রতত্র এলপি গ্যাস পেট্রোল বা দাহ্য পদার্থ বিক্রির কারণে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডসহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা এগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। তাছাড়া যে সকল প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেই তাদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ