ময়মনসিংহের নান্দাইলের গ্রামবাংলার প্রতিটি গম ক্ষেত, মরিচ ক্ষেত এবং বেগুন ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে বথুয়া শাক পাওয়া যেত। বথুয়া শাক মূলত শীতকালে পাওয়া যায়। এটি কেউ চাষ করেনা। জমিতে আগাছার মত আপনা আপনি জন্ম নেয় এ শাক।
কিন্তু এখন আর চোখে পড়েনা সেই বথুয়া শাক। বেথুয়া, বথুয়া শাক, বাইথ্যা শাক, বাইত্তা, বৌতা, ভাত্তা, বেথে শাক, ভাইত্যা শাক, ভেতে শাক প্রভৃতি স্থানীয় নামে পরিচিত। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Chenopodium album। Goosefoot and fat-hen বা Lamb’s quarters বলে ইংরেজিতে।
এ শাকের গড় উচ্চতা ২-৩ ফুট। এটি বিরুত্ জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছের পাতার রং ফ্যাকাসে সবুজ। কাণ্ডে উঁচু শিরা ও বেগুনি রেখা দেখা যায়। পাতার উপর মোমের প্রলেপ থাকায় জল ধরেনা। পাতার নিচেও সাদাটে আস্তরণ থাকে। কাণ্ডে উঁচু শিরা ও বেগুনি রেখা দেখা যায়। চৈত্র-বৈশাখে এদের বীজ মাটিতে ঝরে পড়ে। গাছে প্রচুর বীজ হয়।
বথুয়া বা বেথো শাক গ্রাম-বাংলার খুব পরিচিত একটি শাক। প্রতিটি মানুষের কাছে খুবই পরিচিত শাক এটি। খেতেও বেশ মজাদার। এটি কেউ চাষ করেনা। জমিতে আগাছার মত আপনা আপনি জন্ম নেয় এ শাক। বথুয়া আগাছা হিসেবে পরিচিত হলেও খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ শীতকালীন সুস্বাদু শাক।
এ শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ও জিংক এবং গুরুত্বপূর্ণ ৮টি অ্যামাইনো এসিড থাকে। বথুয়া শাক বিভিন্ন রোগ সারাতে ও রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্যান্য প্রচলিত শাকের চেয়ে বথুয়া শাকে ভিটামিন ‘এ’ বেশি থাকে। ক্যালসিয়াম ও আয়রনের পরিমাণও বেশি থেকে। এ শাকের রয়েছে অনেক ওষধি গুণ। হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, খিদে বাড়ায় ও পেট ব্যথা দূর করে। বথুয়া শাকে থাকা পটাশিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হজম শক্তি বাড়ায়, রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে, কনজাংটিভাইটিস নিরাময়ে সাহায্য করে, অনিয়মিত পিরিয়ড সমস্যা দূর করে।
এ শাক প্রচুর ভেষজ গুণাগুণ সম্পন্ন। হজমশক্তি উন্নত করে, খিদে বাড়ায়, পেট ব্যথা ও দূর করে। কিডনিতে পাথর হলে বথুয়া শাকের জুস খুব উপকার করে।এতে কিডনিতে থাকলে পাথর গলতে শুরু করে। ত্বকের শ্বেত জাতীয় রোগ নিরাময়ে বথুয়া শাক দারুণ কাজ করে।লিভারের সমস্যা, পিত্ত, মলাশয়ের সমস্যা দূর করে। মুখে ঘা হলে বথুয়া শাক চিবিয়ে খেলে বা রান্না করে খেলে ঘা সেরে যায়।
এছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ডায়াটারি ফাইবার যকৃতকে ভালোভাবে কাজ করতে এবং মল নির্গমন প্রক্রিয়াকে সহজ করে। বথুয়া শাকে পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। একই সাথে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। বথুয়া ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। ভিটামিন এ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি এবং প্রতিষেধক সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বথুয়া শাক রক্ত পরিশোধন হিসেবেও কাজ করে।
বীরকামট খালী গ্রামের পঁচাশি ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা জাহেরুন নেছা বলেন, আমাদের সময়ে প্রচুর পরিমাণে বথুয়া শাক পাওয়া যেত।খুব মজা করে খাইতাম আমরা। কিন্তু এখন আর চোখে দেখিনা এই বথুয়া শাক।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন,অবাধে ফসলের জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে শীতকালীন এই বথুয়া শাক।চাষের মাধ্যমে এখন বিলুপ্ত হওয়া এই শাকের আবাদ করা যেতে পারে। অনেক এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষক বথুয়া শাকের চাষ করছেন।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ