রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১

ছাগল পালনে ফিরল মনিরের সুদিন

প্রকাশনার সময়: ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫:২৯

স্কুলজীবনেই সহপাঠির প্রেমে পড়ে মনির। গোপনে বিয়ে করেন ভালোবাসার মানুষকে। বাবা-মার সংসারে ঠাঁই হয়নি। স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান ঢাকায়। চাকরিও জুটে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে। ভালোই চলছিল দিনকাল। ইতোমধ্যেই স্ত্রী লিপির কোল জুড়ে আসে ছেলে। ফলে ঢাকা থেকে চলে আসে সপরিবারে গ্রামে। স্বাচ্ছন্দে বাঁচতে চেষ্টা করেন। পাড়ি জমাযন মালয়েশিয়া। কিন্তু বিদেশেও ভালো করতে পারেনি মনির। দেশে এসে তাই শখের বশে একটি ছাগল পালন শুরু করেন। এ থেকে যাত্রা শুরু। এখন তার খামারে ৩০ টির মত দেশীয় ছাগল রয়েছে।

বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের চরকাটি হারী গ্রামের মনিরুজ্জামান মনির।

দেশে ছাগলের মাংসের যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি দামও সন্তোষজনক হওয়ায় ছাগলের খামার গড়ে তিনি সাফল্য পেয়েছেন।

শখ থেকে শুরু হওয়া ছাগল পালন এখন মনিরকে সফল এক খামারি করে তুলেছে।

তিন বছর আগে ছাগল পালন শুরু করেছিলেন বেকার মনির। এখন তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ৩০। যার বাজার মূল্য প্রায় আট লাখ টাকা। তার খামারে দেশি ছাগলের পাশাপাশি বিদেশি প্রজাতির ছাগলও রয়েছে। মনিরের সফলতা দেখে অনেকেই ছাগলের খামার করতে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।

মনির তার বসতবাড়ির পাশেই নদীর ধারে গড়ে তুলেছেন ছাগলের এই খামার। অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় শখের ছাগল পালন এখন তার পেশায় পরিণত হয়েছে।

মনিরুজ্জামান মনির জানান, ২০১৮ সালে শখের বশে ৮হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনে লালন-পালন শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে আয় করেন ৪০ হাজার টাকা। এরপর তিনি ছাগলের খামার করার সিদ্ধান্ত নেন।

মনির জানান, তিনি ও তার স্ত্রী লিপি নিজেরাই ছাগলের খাওয়ানো পরিচর্যা থেকে শুরু করে দেখাশোনা করেছেন । এছাড়া বাড়ির পাশের পতিত জায়গায় ঘাস আবাদ করেছেন। এই ঘাস উৎকৃষ্টমানের; তাই এই ঘাস দিয়েই ছাগলের খাবারের বেশিরভাগ চাহিদা মেটান।

দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে হলে গরু-ছাগলের জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঁচা ঘাসের প্রয়োজন। আমাদের দেশের অনেক খামারির ঘাস চাষের জমি নেই এবং আবার কিছু খামারি আবাদি জমিতে ঘাস চাষ করতে চান না। কিন্তু গরু ও ছাগলের জন্য কাঁচা ঘাস দিতে হয়। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে জমির প্রয়োজন হয় না, তাই ইচ্ছা করলেই সব খামারি খুব সহজেই এই পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করে গরুকে খাওয়াতে পারেন। এই ঘাসে মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। তাছাড়া উৎপাদন খরচও খুবই কম।

মনিরের স্ত্রী লিপি খাতুন বলেন, ‘ছাগল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার প্রজননে একাধিক বাচ্চা হয়। রোগ-বালাইও কম হয়। বছরে একবার টিকা দিলেই আর কোনো ওষুধ লাগে না। তাই অল্প খরচে বেশি আয় করা সম্ভব।’

মনির বলেন, ‘একটি বিদেশি গাভির জন্য প্রতিদিন ৩০০ টাকার খাবার লাগে। অথচ ৩০০ টাকায় প্রতিদিন ২০টি ছাগলকে খাওয়ানো যায়। ছাগলকে খাওয়ানো হয় গম, ভুট্টা, ছোলা বুটের গুড়ো, সয়াবিন ও ঘাস।’

হোসেনপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ছাগল পালন করে মোটামুটিভাবে সফল হয়েছেন মনির দম্পতি। আমরা নিয়মিত তাদের ওই ছাগলের খামার পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। এখন অনেকেই ছাগলের খামার গড়ে তুলতে পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসছেন। তাদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ