স্বয়ং প্রকৃতি যেখানে বিরুদ্ধে জীবন সেখানে কষ্টের ! অথচ প্রকৃতি চারটি হাত পা কেড়ে নিলেও সদা উজ্জ্বল হাসিমুখ পল্লী চিকিৎসক জব্বার হাওলাদারের।
চার সন্তানের জনক পল্লী চিকিৎসক জব্বার হাওলাদারের জীবনটা চরম কষ্টের হলেও সৃষ্টি কর্তা যেন তাকে একজন যোগ্য অর্ধাঙ্গিনী দিয়েছেন। যার সেবা ও ত্যাগের কারণে আজও মাথা উঁচু করে চলে পল্লী চিকিৎসক জব্বার হাওলাদারের জীবন সংগ্রাম।
অবাক করা বিষয় পল্লী চিকিৎসক জব্বার হাওলাদার লিখতে পড়েন এখনো হাত না থাকা স্বত্বেও।
এই বিষয়ে দৈনিক নয়া শতাব্দীকে জব্বার হাওলাদার তার জীবনের করুন কাহিনী বলেন, “জীবনের নানা উত্থান পতন দেখতে দেখতে জীবন টা বিষের মতো নীল রঙের হয়েছে তবুও সৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস আস্থা রয়েছে”।
তিনি আরো বলেন, “ছাত্র জীবনে ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন করেছেন মেট্রিক পাশ। এর পরে অর্থ অভাবে হয়নি পড়াশোনা। তবে দমে জাননি পল্লী চিকিৎসক জব্বার। আগে এলাকায় পড়াতেন ছাত্র। এর পরে পুরাণ ঢাকার স্যার সুলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে করেছেন এল.এম.এএফ, এর পরে উপজেলা থেকে করেছেন ভি.ডি.আর.এম.এফ”।
মায়ের ইচ্ছে করেছেন পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুরে বিবাহ আর এর পরে প্রথমে একটি কন্যা সন্তান পরবর্তীতে আরো একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। এই ভাবে একটি পুত্র সন্তান ও সর্বশেষ আরো একটি কন্যা সন্তান লাভ করেছেন। তবে এখানেই লুকিয়ে আছে একটি সৃষ্টিকর্তার লীলা। তিনি যেন তার চারটি হাত পা কেড়ে নিলেন তার সন্তানদের জন্ম দেওয়ার জন্য।
তিনি আরো বলেন, বড় মেয়েকে সখ করে বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাঁশের চটি দিয়ে তৈরি রিং। সেই রিং তৈরি করতে গিয়ে কেটে যায় আঙুল। সেখান থেকে সৃষ্টি হয় বার্জার ডিজিস সঙ্গে গ্যাংরিন রোগ। একটু একটু অঙ্গ হারাতে হারাতে এখন চার হাত পা শেষ শুধুমাত্র টিকে আছে ডান হাতের সামান্য কিছু অংশ।
এতো খারাপ সময় জোটেনি কোন সরকারী অনুদান বা গ্রামের প্রতিবেশীদের সহযোগিতা। নিজের জমা জমি বিক্রি করে করছেন চিকিৎসা। ঘুমাতে পারেন নি বহু রাত খেতে পারেন নি ছয় মাস। ছিল একটি প্রতিবন্ধী ভাতা তাও স্থানীয় প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ছিল দের বছর বন্ধ। ডিসি অফিস ও উপজেলা অফিসে ঘুরে আবার জুটেছে ভাতা।
তাই তো আক্ষেপ টা বেশী ছিল, চান আর কিছু ডাল ভাত খেয়ে মৃত্যুবরণ করতেই পারলেই নাকি হবে তার মুক্তি।
সিদ্দিকুর রহমান নামে এক রোগী দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, “তার চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত ভালো। আমাদের এলাকার মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা উনিই প্রদান করেন। নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা স্বত্বেও তার সেবা অতুলনীয়”।
জব্বার হাওলাদার এর স্ত্রী হেলেনা বেগম কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, “আমি তাহার ভালো সময় পাশে ছিলাম এখন তাহার খারাপ এখন কি করে তাকে ছেড়ে চলে যাই। আমার স্বামী তো আমার মাথার তাজ। তিনি কখনোই কারো কাছে হাত পাতে না। বরং নিজে পরিশ্রম করেই রুটি রুজির ব্যবস্থা করেন”।
এই বিষয়ে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, “তার যেহেতু প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড আছে সেহেতু আমাদের আসলে আর কিছু করার নেই। আমাদের আর কোন ফান্ড নেই। সরকার আমাদের দুই ধরনের ফান্ড দিয়ে থাকেন। ১ প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, ২ চিকিৎসা র জন্য চিকিৎসা ফান্ড”।
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহাসিন ফকির দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, আমাদের তেমন কিছু করার নেই, ড্রাগ লাইসেন্স এর বিষয়টি ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর আন্ডারে হবার কারণে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমাদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিম উদ্দিন দৈনিক নয়া শতাব্দীকে বলেন, যদি তার এই দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য আমাদের অন্য কোন ধরনের সহযোগিতা সে (পল্লী চিকিৎসক জব্বার হাওলাদার) প্রয়োজন মনে করেন আমাদের দ্বারস্থ হয় তাহলে অবশ্যই সহযোগিতা করবো। আর যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি তদন্ত করে দেখবো আসলে তার কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা! তাকে কি করলে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, তার যেহেতু নিজের নামে ড্রাগ লাইসেন্স নেই যদি সে ড্রাগ লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেন তার লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ