দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম যাত্রী পরিবহন ঘাট হচ্ছে চাঁদপুর লঞ্চঘাট। প্রতিদিন কমপেক্ষ অর্ধলক্ষ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন এই ঘাট দিয়ে। কিন্তু যাত্রীদের জন্য লঞ্চঘাটে যেসব সুবিধা থাকা দরকার যেসব সুবিধার নূন্যতম নেই এই ঘাটে। দিন ও রাতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে যাত্রীদের এই ঘাট ত্যাগ করতে হয়।
বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা থেকে এই ঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন। আধুনিক নৌ-বন্দর হওয়ার কথা থাকলেও সেই প্রকল্প এখনো শুরু হয়নি। অচিরেই বন্দর নির্মাণের দরপত্র আহবান করা হবে বলে জানিয়েছেন বিআইডাবিব্লউটিএ কর্তৃপক্ষ।
গত কয়েকদিন লঞ্চঘাটে অবস্থান করে এবং যাত্রী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ভোগান্তির বিষয়গুলো জানাগেছে। দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে অধিকাংশ যাত্রীই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চাঁদপুর নদী বন্দর খুবই প্রাচীনতম। এক সময় শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণ বাজারের সাথে সংযুক্ত ছিলো নৌ-টার্মিনাল। কিন্তু মেঘনা মোহনায় লঞ্চ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ১৯৯৬ সালে মাদ্রাসা রোডে বিকল্প লঞ্চঘাট স্থাপন করা হয়। কিন্তু এখানে লঞ্চ চলাচলের ঘাট তৈরী করা হলেও লক্কর জক্কর জিনিসপত্র দিয়ে ঘাট পরিচালনা হচ্ছে।
পন্টুন ভাঙা, পন্টুনের উপরের টিনের চাউনী ভাঙা, জেটিগুলো উচু নিচু। যাত্রীরা ভোর থেকেই ঘাটে আসতে শুরু করেন। কিন্তু বসার মত কোন স্থান নেই। নির্দিষ্ট যাত্রী চাউনী নেই। বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। পুরো লঞ্চঘাটটি একটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে আধুনিক নৌ বন্দর করার জন্য উন্নয়ন কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান।
চাঁদপুর লঞ্চঘাটের দায়িত্বরত পরিবহন পরিদর্শক শাহ আলম জানান, প্রতিদিন চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে ২৪টি, চাঁদপুর-নারায়নগঞ্জের মধ্যে ১৩টি লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়াও প্রতিদিন দক্ষিণাঞ্চলসহ প্রায় ৮০-৯০টি লঞ্চের ভায়া ঘাট হিসেবে যাত্রী উঠ-নামা করে। বিশেষ করে ট্রেনে চাঁদপুরে এসে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম থেকে যাত্রীরা দক্ষিণাঞ্চলে এবং ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, নোয়াখালী ও শরীয়তপুরের অনেক যাত্রী এই ঘাট দিয়ে চলাচল করে।
কচুয়া থেকে আসা মো. ফারুক ও হাইমচরের ইশানবালা থেকে আসা যাত্রী রিয়াদ আল নাছের বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে ঘাটে প্রবেশের জন্য ১০টাকা টিকিট নেয়া হয়। কিন্তু কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা এই ঘাটে নেই। সরকার ঘাটটি আধুনিক করার জন্য খুব দ্রুত উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। ঘাটের সিএনজি চালকরা যাত্রীদের মালামাল নিয়ে টানা হেচড়া করে। এই ঘাটটি খুবই বিশৃঙ্খল। ভোগান্তির শেষ নেই।
লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থেকে আসা যাত্রী ওমর ফারুক বলেন, লঞ্চঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী আসে। কিন্তু মহিলা ও শিশুদের কোন বসার ব্যবস্থা নেই। লঞ্চ ছেড়ে চলেগেলে পরবর্তী লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘ সময় পন্টুনে মালপত্র নিয়ে বসে থাকতে হয়।
লঞ্চমালিক প্রতিনিধি রহুল আমিনও জিল্লুর রহমান বলেন, লঞ্চঘাটটি আধুনিক নৌ-বন্দর হওয়ার কথা থাকলেও হচ্ছে না। আমরা কোন আশার আলো দেখছি না। কিন্তু যাত্রীদের নূন্যতম সুবিধা বিশুদ্ধ পানি, টয়লেট, বসার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি।
চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম যাত্রী পরিবহন ঘাট চাঁদপুর। যাত্রীদের সমস্যাগুলো আমি অবগত। কারণ এসব সমস্যা নিয়ে আমাকে ঘাট পরিচালনা করতে হয়।
বিআইডাব্লিউটিএ ঢাকার প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে জেনেছি আধুনিক নদী বন্দর নির্মাণের প্রকল্প কাজ শুরু করার জন্য প্রস্তুতি এগিয়েছে। ডিসেম্বর মাসে দরপত্র আহবান করার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি নির্মাণ হলে যাত্রীদের আর কোন ধরণের সমস্যা হবে না।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ