ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

তাড়াইলের হাদিস মিয়ার বিস্ময়কর আবিষ্কার

প্রকাশনার সময়: ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৪৭

কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে হাদিস মিয়া নিজের বুদ্ধিমত্তায় দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় আবিষ্কার করেছেন তেল-মবিল ছাড়া অটো ওয়াটার সাপ্লায়ার। তিনি তার নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু অটো ওয়াটার সাপ্লায়ার।

উপজেলার তাড়াইল-সাচাইল (সদর) ইউনিয়নের পূর্ব পংপাচিহা জালধোয়া গ্রামের ইদ্রিস মুন্সির ছেলে হাদিস মিয়া (৪৫) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীত একক প্রচেষ্টায় তৈরি করেছেন তেল মবিল ও বিদ্যুৎ ছাড়া এ অটো ওয়াটার সাপ্লায়ার। নদী থেকে নিজের কৃষি জমিতে সেচ দেয়ার জন্য তৈরি করছেন অটো ওয়াটার সাপ্লায়ার।

সরেজমিনে দেখা গেছে,নিজ বাড়ি সংলগ্ন নরসুন্দা নদীর পাড়ে নিজের উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে কোনরূপ খরচ ছাড়াই অনবরত নদী থেকে পানি তুলে নিজ জমিতে সেচ দিয়ে যাচ্ছেন হাদিস মিয়া।বাংলাদেশ কৃষি মাত্রিক দেশ,নদী মাত্রিক দেশ। কৃষক জমিতে পয়সাবিহীন কিভাবে সেচ দিতে পারে সে চিন্তা করে অটো ওয়াটার সাপ্লাই মেশিনটি আবিষ্কার করেছেন তিনি। কিভাবে বাতাসের সাহায্যে নদী থেকে পানি উত্তোলন করা যায় সে গবেষণা করতে দীর্ঘ ১০টি বছর লেগেছে তার।১৬টি ড্রামের একটা প্রেশার। সে ১৬টি ড্রামের ৪টি সংযোগ আছে। ৪টি লাইনে ৪টি সেক্টর। প্রত্যেক সেক্টর ভাগ ভাগ করা আছে।পিছনে একটি আউট লাইন আছে ৪ইঞ্চি। আর এ ৪ইঞ্চি লাইন দিয়ে জমিতে পানি যায়। পাইপ যতটুকু লোড সামলাতে পারে ততটুকু ৪টি লাইন অন করেন। আর এ প্রক্রিয়ায় দিনরাত ২৪ঘন্টাই অনবরত শব্দহীন তেল মবিল ও কোনও খরচ ছাড়াই নদী থেকে পানি উঠছে ড্রামে এবং তা সরবরাহ হচ্ছে নিজের কৃষি জমিতে ও পুকুরে।আশেপাশের গ্রাম থেকে উৎসুক জনসাধারণ ও স্থানীয় কৃষক প্রতিদিনই দেখতে ভিড় করছেন হাদিস মিয়ার অভিনব আবিষ্কার।

প্রথম বছর হাদিস মিয়া ছোট ছোট প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে মানব দেহে স্যালাইন পুষ করার পাইপ দিয়ে শুরু করেন এই প্রক্রিয়া।ভালো কাজ করছে দেখে হাফ ইঞ্চি পাইপ দিয়ে নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। সফলতাও পান। পরের বছর ১ইঞ্চি পাইপ তারপর ২ইঞ্চি,৩ইঞ্চি পরিশেষে ৪ইঞ্চি পাইপে অনবরত পানি সরবরাহ করছেন।নিজের ৬একর জমিতে ও পুকুরে প্রায় ৪০০ফুট দূরে সারা বছর খরচ ছাড়াই সেচ দিচ্ছেন ।

তিনি জানান,এ অটো ওয়াটার সাপ্লায়ারটি তৈরি করতে সর্বমোট ১ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এটি কিভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে ১৬টি ড্রামকে মর্টার দ্বারা পরিপূর্ণ করি। পরে নিচে একটি বড় চাবি আছে তা যদি ছাড়ি তখন এখানে একটি কমপ্রেসার সৃষ্টি হয়। কমপ্রেসারটির নিচে যে আটটি ড্রাম আছে। এ আটটি ড্রাম নিচের চারটি ড্রাম থেকে পানি টেনে নেয়। এতে উপরে বাতাসের শূন্যতা সৃষ্টি হয়। আর এ শূন্যতায় পানি উপরে তুলে। এ অটো ওয়াটার সাপ্লাই চালু ও বন্ধ করার সুইচও আছে। আমার এ পদ্ধতি সারাবাংলার কৃষক ব্যাবহার করলে তেল মবিল ছাড়াই জমিতে সেচ দিতে পারবে। সরকার যদি আমার এ পদ্ধতি আমলে নেয় তাহলে বিনা তেলে, বিনা খরচে কৃষক জমিতে সেচ দিতে পারবে। আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।

হাদিস মিয়া আরো জানান,আমি মূলত বাস,ট্রাকের ইঞ্জিন মিস্ত্রি। বিএডিসির কৃষি সেক্টরে মাষ্টাররোলে চাকরি করতাম। চাকরি স্থায়ী করণ না হলে বিদেশে চলে যাই। সেখানেও সুবিধা করতে পারেননি। দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে এসে অটো ওয়াটার সাপ্লায়ারটা করার চিন্তা ভাবনা করি। বঙ্গবন্ধু দেশ প্রেমিক ছিলেন তাই ওনার নামে অটো ওয়াটার সাপ্লায়ের নাম দিয়েছি। আমি যদি দুনিয়াতে নাও থাকি বঙ্গবন্ধু অটো ওয়াটার সাপ্লাই মিশিনটির আবিষ্কারক হিসাবে আমার নাম থাকবে এটাই আমার প্রাপ্তি। বাংলাদেশের যে কোন কৃষক আমার কাছে আসে তাহলে বিনা পারিশ্রমিকে সাহায্য করবো।নিজের জমি ছাড়াও অন্যের জমিতে সেচ দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমার। সরকারি সহযোগিতা পেলে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারবো নিজের এই আবিষ্কার। একবার স্থাপন করার পর কোন খরচ ছাড়াই সারাবছর সেচ দেয়া যাবে জমিতে।

তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আশরাফুল আলম বলেন, হাদিস মিয়ার উদ্ভাবনটি কতটুকু কার্যকর তা বিএডিসি সেচ কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। যেহেতু এটার কারিগরি দিক আছে সেহেতু উদ্বর্তন কর্মকর্তারা টেকনিকাল সাইট দেখে ওকে বলে তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।আমি ইতোমধ্যেই বিএডিসি সেচ প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলেছি। তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি সরেজমিনে দেখবেন। আমি সরেজমিনে দেখছি রিজার্ভ ওয়াটার উঠাতে কার্যকর এ মেশিনটি। যেহেতু তেল-মবিল ছাড়াই পানি উঠছে তাতে প্রান্তিক কৃষক লাভবান হবেন।

তাড়াইল উপজেলা সদর বাজার থেকে প্রায় ২কিলোমিটার দক্ষিণে তাড়াইল-করিমগঞ্জ সড়কের পাশেই স্থাপিত করেছেন হাদিস মিয়া বঙ্গবন্ধু অটো ওয়াটার সাপ্লায়ার।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ