পদ্মা-মেঘনা উপকূলে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার চরাঞ্চলের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। আতঙ্কে দিন-রাত কাটাতে হয় চরের শত শত পরিবারের। বিশেষ করে নীলকমল ও হাইমচর ইউনিয়নে বছরজুড়েই বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙন বাড়লে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জরুরিভাবে ভাঙন প্রতিরোধ করা হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু স্থায়ী বাধের দাবি স্থানীয় লোকজনের। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে স্থায়ী বাধের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হাইমচর উপজেলার ৫নং হাইমচর ইউনিয়ন পরিষদ মেঘনা নদীর পশ্চিমে অবস্থিত। মেঘনার একাধিক ভাঙনে এই ইউনিয়নের অনেক মানুষ ছিন্নমূল হয়ে পড়ে। প্রায় ২০ হাজার লোকের বসবাস এই চরে। অধিকাংশ মানুষই কৃষি ও মৎস্য আহরণ করে জীবন জীবীকা নির্বাহ করে। এখানকার কৃষি উৎপাদন ও মৎস্য আহরণ দেশের অর্থনীতিতে বেশ ভূমিকা রেখে আসছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে প্রচুর পরিমানে মরিচ আবাদ হয়। ইউনিয়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫টি মসজিদ, একটি বড় বাজার ও ৬টি মৎস্য আড়ৎ রয়েছে। ভাঙনের কারণে এসব স্থাপনা এখন হুমকির মুখে। বিশেষ করে একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৫ বার ভাঙনের শিকার হয়। এখন আবারও বিদ্যালয়টি ভাঙন হুমকিতে রয়েছে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের কাছে এসে গেছে মেঘনা নদী। প্রতিদিনই ভাঙছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে থাকি। এর আগের ভাঙনেও আমাদের পড়া-খেলার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আমাদেরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় অনেক কষ্ট করে ক্লাস করতে হয়। সরকার যেন আমাদের বিদ্যালয় রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা আ. রহমান জানান, মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। সরকার বাধের উদ্যোগ নিলেও এখন পর্যন্ত হচ্ছে না। তবে আমরা আশা করছি সরকার দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়ে মানুষ মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবে। বর্তমান ভাঙনে বিদ্যালয়টি যে কোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে। বিদ্যালয়টি রক্ষা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল হক জানান, আমাদের বসতবাড়িসহ একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি পাঁচবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। এখন আবার ভাঙন হুমকিতে। খুব নিকটে এখন নদী ভাঙছে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি ব্যবস্থা নিলে বিদ্যালয়টি রক্ষা হবে। আমরা সরকারের নিকট স্থায়ী বাধ নির্মাণের দাবি জানাই।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাত জামিল বলেন, ‘হাইমচর উপজেলার নীল কমল ইউনিয়ন ও হাইমচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ভাঙনের বিষয়টি আমরা অবগত। ইতোমধ্যে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ঘটনা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। প্রকল্প তৈরী করে পাঠানো হবে। বিদ্যালয় ভাঙন এলাকাটিও আমাদের নজরে আছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ