অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের কারণে নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে সৈয়দপুরের শেষ সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে অনেকেই অকালে হারাচ্ছেন প্রাণ আর কেউ বা বরণ করছেন পঙ্গুত্ব। দীর্ঘদিন রেলক্রসিং অরক্ষিত থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এ রেলপথে ৩৩টি ক্রসিং এর মধ্যে ১২টি অরক্ষিত ও তিনটি অবৈধ রেলক্রসিং পারারাপারে চলতি ২০২১ সালে অকালে প্রাণ হারিয়েছে ৫০ জন। তবে ২১টিতে রয়েছে গেটম্যান। ৫০টি তরতাজা প্রাণ অকালে ঝরে যাওয়ার পরেও বোধোদয় হয়নি রেল কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এ রেলপথে ৩৩টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ১২টি অরক্ষিত ও তিনটি অবৈধ। এসব ক্রসিং দিয়ে অবাধে পারপার করছে হাজারো পথচারী এবং বাই-সাইকেল, রিকশা, ব্যাটারীচালিত থ্রি-হুইলার, সিএনজি, ট্রাক্টর, পিকআপ, মাইক্রো, মিনিবাস, বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক।
রেল কর্তৃপক্ষ ক্রসিং এর দুই পাশে সাইনবোড টানিয়ে দিয়ে লিখে দিয়েছে “এই গেটে কোনও গেটম্যান নেই-পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহন চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার হবেন। যে কোনও দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন।” আবার অন্য সতর্কবার্তায় দেখা গেছে, “এই স্থানে রেললাইনের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ।” এরকম সাইনবোড টানিয়ে দিয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের দায় সেরেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, এ রেলপথে ১২টি অরক্ষিত ও তিনটি অবৈধ ক্রসিং অতিক্রম করার সময় ট্রেনের গতি কমানো হয়না। এমনকি ট্রেনের হুইসেল পর্যন্ত বাজানো হয়না। ক্রসিংগুলো অতিক্রম করার সময় মানুষ বা যানবাহন পারাপারের বিষয়টি ট্রেনের চালকের দৃষ্টিতে এলেও ব্রেক পর্যন্ত ধরা হয়না। এতে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এতে অকালে প্রাণ হারানোর পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বরণ করলে গেটম্যান দেয়ার কোন পদক্ষেপ নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ। গত আট ডিসেম্বর ট্রেন কাটা ও ধাক্কায় নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দুপুকুর ইউনিয়নের মনসাপাড়া এলকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে একই পরিবারের তিন শিশুসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে একই স্থানে আরো কয়েকবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশ সুপার সিদ্দিকী তানজিলুর রহমান বলেন, স্থানীয় সরকার, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নিলে রেলপথের নিরাপত্তা অনেকটাই নিশ্চিত করা সম্ভব। ট্রেন ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের নেই নিরাপত্তা কর্মী, রেলক্রসিংয়ে নেই সংকেত বাতিও। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে কোন কোন সময় ট্রেন হুইসেল না দিয়ে চলে যায়।
ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায় ওই এলাকায়। এতে সুনাম নষ্ট হচ্ছে রেল বিভাগের। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত রেলক্রসিং পার হতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে ৫০ জন। দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তারা সবাই পথচারী ও শিশু। এরপরেও ওই সব স্থানে দেওয়া হয়নি সুরক্ষিত গেট ও গেটম্যান।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, রেলগেটের পাশে সতর্কবার্তা ও সাবধানতার বাণী দেওয়া হয়েছে। পথচারীরা এটি দেখে চলাচল করবেন। এ ছাড়াও রেললাইনের দুই পাশে বসবাসকারীদের নানা ধরনের পরামর্শ দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে মানুষের প্রাণহানি নিয়ে রেলের দায়বদ্ধতা নেই। কারণ যানবাহন চলাচলে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, এ জন্য যানবাহন ও মানুষ পারাপারে জন্য রেল কর্তৃপক্ষ একটি সতর্কবাণী সংবলিত সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের বেশির ভাগ সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে। কিন্তু রেলক্রসিংয়ের নিরাপত্তা রক্ষায় তাদের নেই উদ্যোগ।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ