দৈনিক নয়া শতাব্দী পত্রিকায় ‘৮ টাকার পাসে ঘুষ ৫শ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে।
গত শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) সকালেই সদরের পত্রিকা এজেন্টের কাছে থাকা নয়া শতাব্দীর সব কপি বিক্রি হয়ে যায়। অনেক পাঠক পত্রিকা না পেয়ে সংবাদটি ফটোকপি করে নেন।
নয়া শতাব্দীতে প্রকাশিত সংবাদটি মৎস্যজীবী ও জেলেদের দৃষ্টিগোচর হলে সবাই সন্তোষ প্রকাশ করেন। অনেকেই পত্রিকা না পেয়ে ফটোকপির দোকানে ভিড় জমান। জেলেদের অভিমত এমন লেখনির মাধ্যমে এই সুন্দরবনে বন্ধ হবে জেলেদের উপর নির্যাতন।
বুড়িগোয়ালিনীর দাতিনাখালি গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে সুন্দরবনের মাছ ধরে আমাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তখন থেকেই দেখে আসছি বনবিভাগের হাতে নিষ্পেষিত সাধারণ জেলেরা। স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে মাঝেমধ্যে বন বিভাগের ঘুষ বাণিজ্যের প্রতিবেদন হলেও সেগুলো কোন রকম তদন্ত হয় না। ফলে শত অন্যায় করেও বহাল তবিয়তে অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়।রমজান নগর ইউনিয়নের সোরা গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, ‘পত্রিকায় লেখালেখি হলে বনবিভাগ তাদের ঘুষ বাণিজ্য সাময়িক বন্ধ রাখেন। কিছুদিন অতিবাহিত হলেই আবার পুরানো চেহারায় ফিরে যান তারা।’
মুন্সিগঞ্জ জেলে পাড়ার অবিনাশ বলেন, ‘বন বিভাগের নির্যাতন আমাদের মত গরীব মানুষের উপর। সামান্য কয়েকটা কাঁকড়ার খাঁচা নিয়ে লোকালয়ের পারে গিয়েছিলাম তার জন্য আমার সবকিছু নিয়ে গেছে বন বিভাগের বুড়িগোয়ালিনী অফিস।’
‘শুধু তাই নয় বন বিভাগের প্রথম কার্যক্রম নতুন বিএলসি থেকে শুরু করে পাস পারমিটসহ সুন্দরবনের প্রতিটি সেক্টরে ঘুষ ছাড়া মাছ, কাঁকড়া আহরণ করা যায় না।’
যদি কোন জেলে বনবিভাগের চাহিদা মত ঘুষ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে জেলের শেষ সম্বল মাছ ধরা জাল ও নৌকা খোয়াতে হয়। অনেক সময় শুধু জাল নৌকা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন না বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরীহ জেলেদের নামে মামলাও ঠুকে দেন।
সুন্দরবন মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘অসহায় জেলেদের নিয়ে দীর্ঘদিন লড়ে যাচ্ছি। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের তিন ভাগের দুইভাগ বর্তমান সময়ে পরিবেশের নিয়ন্ত্রণাধীন। পরিবেশ বা অভয়ারণ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন খালগুলোতে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীরা টাকার বিনিময় দীর্ঘদিন মাছ ধরা সুবিধা দিয়ে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে সমস্ত জেলেরা তাদের চুক্তির বাহিরে সুন্দরবনের মাছ ধরতে যায় তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন এমন অনেক প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। অভয়ারণ্য মাছ ধরা বন্ধ ও জেলে হয়রানি বন্ধে অনেক আন্দোলন করলেও কিছু অসাধু বন বিভাগের সদস্যদের কারণে সফলতা পেতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
বন বিভাগের অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে সম্পূর্ণ চাপটা জেলেদের উপর পড়ে। বিভিন্ন আইনের জটিলতায় জেলেদের মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতি শ্যামনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘আমরা ইতিপূর্বে বিষয়টা নিয়ে কয়েকবার বনবিভাগের সাথে বসেছি। কোন দিক থেকে কোন সুরাহা হয় না। তবে বর্তমানে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি জেলেদের ওপর নির্যাতন কোন অবস্থায় আর বরদাস্ত করা হবে না।’
তিনি দৈনিক নয়া শতাব্দীর মাধ্যমে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অসহায় গরীব জেলেদের যে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হয়রানি করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এলাকার সুশীল সমাজের দাবি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে উপকূলীয় জেলেদের মাছ কাঁকড়া আহরণের সুযোগ করে দেবেন বন বিভাগ। বন বিভাগের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন বলে দাবি করেন তারা।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ