ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
এরশাদুল হক হত্যা

কাম সাইরা লাইছি, তাড়াতাড়ি চল!

প্রকাশনার সময়: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ২২:২৫

কুয়াশা ও অন্ধকার। রাত তখন নয়টা। স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এরশাদুল হক (৩৫)। পেছন মোটরসাইকলে ছিলেন তার ছোট ভাই আক্তারুজ্জামান। কিন্তু পথের মধ্যে এক লোক আক্তারুজ্জামানকে ডাক দিলে তিনি কিছুটা সময়ের জন্য দাঁড়ান ওই ব্যক্তি সঙ্গে কথা বলার জন্য। এর মধ্যে তাদের দূরত্ব কিছুটা বেড়ে যায়।

সড়কটা ছিল অনেটাই নির্জন, তার ভাইয়ের মোটর সাইকেল সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ঠিক সেই মুহূর্ত গোলাগুলির শব্দ। দৌড়ে গিয়ে দেখেন এরশাদুল হক রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কের পাশে পড়ে আছেন। তার ভাইয়ের সঙ্গে থাকা অপরজন ঘটনাস্থলে মারা যান।

কিলিং মিশনে লোক ১৫/১৬ জন ছিলো। তাদের হাতে ছিল অস্ত্র। তারা মূর্তের মধ্যেই কিলিং মিশন শেষ করে মোটরসাইকেল যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দিকে রওনা দেয়। ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে আঞ্চলিক সড়কের পাশেই একটি ঘরে বাস করেন স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন। ঘরের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বসে কথা বলছিলেন। তিনি প্রথমে মনে করেছিলেন পাশের বাড়িতে বিয়ে চলছিল মনে হয় বিয়ে বাড়ির ছেলেরা পটকা ফোটানো হচ্ছে। কিন্তু গুলির শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হন।

তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে যাবার সময় দেখি মোটরসাইকল থেকে কথা বলতাছে কাম সাইরা লাইছি। তাড়াতাড়ি চল। তখন কাছে গিয়ে দেখি এরশাদ ভাই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। গুরুতর আহত অবস্থায় লোকজন এরশাদুল হককে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠালে পথেই তার মৃত্যু হয়।

নিহতের ছোট ভাই আক্তারুজ্জামান বলেন, আমি বিদেশে থাকি। ভাইয়ের নির্বাচনের জন্য আমি ছুটি নিয়ে দেশে এসেছি। গতকাল রাতে আমার ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামের একটি ওয়াজ মাহফিলে যাই। পরে সেখান থেকে দুই মোটরসাইকলে করে একসঙ্গে রওনা দেই। আমার ভাইয়ের গাড়ি ছিল সামনে। পথের মধ্যে এক লোক আমাকে ডাক দিলে এক মিনিটের জন্য দাঁড়াই। পরে দেখি গুলির শব্দ। তখন দৌড়ে গিয়ে দেখি ৪/৫টা মোটরসাইকেলে ১৫/১৬ লোক। তারা আমার ভাইসহ আরেকজনকে গুলি করে মুহূর্তের মধ্যেই চলে যায়।

নিহত এরশাদকে স্থানীয় নান্দুরা ঈদগাহ মাঠে শনিবার রাতে জানাজা শেষে নান্দুরা কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি। এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আমিনুর রশিদ।

নিহতের এরশাদুলের স্ত্রী ইসরাত জাহান সুমি বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। আমার ছোট ছোট দুই ছেলে ও এক মেয়েকে এতিম করে চিরজীবনের জন্য চলে গেছেন। আমি এই শোক কি করে সইবো। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘গ্রেফতার এবং কারণ অনুসন্ধানের জন্য জেলা পুলিশের পক্ষে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে, বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তদন্ত শেষে বলা যাবে কি করণে এই ঘটনা ঘটেছে’।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘ঘটনা স্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে, অত্যন্ত গুরুত্বসহ বিষয়টি বিশ্লেষণ করছি, যত দ্রুত সম্ভব রহস্য উদঘাটন করার লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে আমরা এখন পর্যন্ত এগিয়ে যাচ্ছি’।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ