ফরিদপুরের করিমপুর হাইওয়ে থানায় হামলার ঘটনায় জড়িত ৭ যুবককে আটক করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। আটককৃতদের শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে আমলী আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুর আড়াইটায় ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে থানায় হামলার ঘটনায় জড়িতদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা জানান, গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর এলাকায় নির্মাণাধীন আমজাদ সরদারের জুট মিল মাঠ এলাকায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে স্থানীয়রা। ওই মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে বিতর্কিত বক্তা আবু ত্বহা ওয়াজ করবেন বলে মাইকিং করা হয়। মাইকিং শুনে কোতোয়ালী থানার অফিসারকে পাঠানো হয় এবং আবু ত্বহাকে ওয়াজ মাহফিলে না আনার জন্য অনুরোধ করা হয় মাহফিলের আয়োজকদের। পাশাপাশি আয়োজকদের বলা হয় আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে আবু ত্বহা ওয়াজে অংশ নিতে পারবে না।
তিনি আরো জানান, ওই সময় আয়োজক কর্তৃপক্ষ আবু ত্বহাকে আনবে না বলে আশ্বস্ত করে। কিন্তু রোববার রাতে কৌশলে আয়োজক কমিটি বিভিন্ন বক্তাদের দিয়ে ওয়াজ মাহফিল শুরু করেন। এক পর্যায়ে মঞ্চ থেকে বলা হয় আবু ত্বহাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসতে দেন নাই, এমন কথা শোনার পর উপস্থিত জনতা ও স্থানীয় বক্তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। তাদের উস্কানিমূলক বক্তব্যে প্ররোচিত হয়ে মাহফিলে উপস্থিত থাকা জনতা লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র, লোহার রড নিয়ে হাইওয়ে থানায় হামলা চালায়।
জামাল পাশা আরো জানান, হামলায় থানার বিভিন্ন মালামাল, এ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ভাঙচুর করা হয়। হামলায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়। এঘটনায় পরদিন ওই হাইওয়ে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন শাহ ও থানার ভবনের মালিক নান্নু শেখ বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানান, মামলা দায়েরের পর কোতোয়ালী থানা পুলিশ সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের আটকে অভিযান চালাতে থাকে। শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সজীব বেপারী (২২), রাফি মোল্যা (১৮), পারভেজ (২১), আকাশ শেখ (২২), সোহেল (১৮), রাকিব মাতুব্বর (২০) ও সাজ্জাদ (২৫) কে আটক করা হয়। আটককৃত সকলেরই বাড়ী ফরিদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত সকলেই হামলার ঘটনার সাথে জড়িত বলে স্বীকার করেছে। এছাড়া অন্যদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর এলাকায় নির্মাণাধীন আমজাদ সরদারের জুট মিল মাঠ এলাকায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। অনুমতি না থাকায় ইসলামি বক্তা আবু ত্বহাকে মাহফিলে ওয়াজ করতে না দেওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা হাইওয়ে থানায় হামলা চালায়।
পরদিন ওই হাইওয়ে থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন শাহ ও থানার ভবনের মালিক নান্নু শেখ বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা করে তিন পুলিশ সদস্যকে আহত করা, থানা ও পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ আনা হয়।
থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন শাহ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ভিডিও ফুটেজ দেখে আটজন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ থেকে ২৫০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
এছাড়া ভাঙচুরের ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়ের করেন নান্নু শেখ নামের এক ব্যক্তি। তিনি করিমপুর হাইওয়ে পুলিশ ভবনটি যে বাড়িতে অবস্থিত, সেই বাড়ির মালিক। হামলার সময় তার ব্যক্তিগত একটি মাইক্রোবাস ও ভাড়ায় চালিত একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়। ওই মামলায় ১শ থেকে ১৫০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ