১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। তবে দেশের বিভিন্ন জেলা স্বাধীনতার উল্লাসে মেতে উঠলেও রাজবাড়ী মুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। কারণ এখানে বিহারী, পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকারা এক হয়ে যুদ্ধ অংশ নেয়। এ সময় অবাঙালি বিহারীরা অতিমাত্রায় তৎপর হয়ে ওঠে। পুরো শহর তারা দখল করে রাখে।
৯ ডিসেম্বর শহরের লক্ষ্মীকোল রেলওয়ে ওয়ার্কশপ ও লোকোশেড এলাকায় বিহারিদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল সংঘর্ষ হয়। বিহারিদের গুলিতে রফিকুল ইসলাম রফিক, শফিকুল ইসলাম শফিক ও রুহুল আমিন সাদিক শহিদ হন। বিহারিরা ১৩ ডিসেম্বর শহরের বিনোদপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ অফিসের প্রহরীকে হত্যা করে। ১৬ ডিসেম্বর প্রায় সারা দেশে পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও রাজবাড়ী শহর তখনও অবাঙালিদের দখলে থাকে।
এর আগে ২২নভেম্বর রাজবাড়ীর কৃতী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খুশি রাজবাড়ী-ফরিদপুর রোডের আলাদীপুর নামক স্থানে ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার সময় পাকবাহিনী ও তাদের দোসর বিহারিরা তাকে হত্যা করে। তাকে ট্রাকে বেঁধে শহর দিয়ে টেনে নির্মমতা প্রদর্শন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
এ সময় মুক্তি বাহিনী রাজবাড়ী জেলা সীমানার চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। ইতোমধ্যে ইলিয়াস মিয়া(মৃত) শহিদুন্নবী আলম, কামরুল হাসান লালী, সিরাজ আহম্মেদ, আবুল হাসেম বাকাউল, রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিহারি মুক্ত করতে প্রস্তুতি নেয়। তাদের সাথে জেলার পাংশা থেকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মিয়া, নাসিরুল হক সাবু, যুক্ত হন। অবাঙালিরা শহরের রেল লাইনের উত্তর পাশে অবস্থান নেয়। তারা রেলওয়ে লোকোশেড থেকে ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি পর্যন্ত রেলের মালগাড়ি দিয়ে ব্যূহ তৈরি করে। মুক্তিবাহিনী শহরের দক্ষিণ দিক থেকে গুলি চালাতে থাকে। পরে মর্টার সেল দিয়ে গুলি ছুঁড়লে বিহারিরা পিছু হটে। সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে কয়েক হাজার বিহারি নিহত হয়। ওই যুদ্ধে দিয়ানত আলী শহীদ হন এবং ইলিয়াস হোসেন মিয়া মাথায় গুলি বিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। ১৮ ডিসেম্বর দখলমুক্ত হয় রাজবাড়ী জেলা।
রাজবাড়ী মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ১৮ ডিসেম্বর শহিদ খুশি রেলওয়ে মাঠের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে আলোচনা সভা ও বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ