ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুচকা বিক্রেতার হাতে শিল্পের ছোঁয়া

প্রকাশনার সময়: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:২৪ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৩১

পেশায় ফুচকা বিক্রেতা। ঠাকুরগাঁওয়ের সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবকের কাছে আজিজ মামা নামেই পরিচিত স্বাধীনতার পর থেকেই। শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পাশের একটি ছোট ফুচকার দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। সারাদিন অনেক কিছু খাওয়া হলেও তার হাতের ফুচকা না খেলে মনের তৃপ্তি মেটে না এমটাই মনে করেন ফুচকা প্রেমীরা।

কিন্তু এই ফুচকা বিক্রেতার যে এই পেশার বাইরেও আরো একটি পরিচয় রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে তিনি একজন চিত্র শিল্পী। দিন শেষে রাতে অবসর সময় পার করেন কাঠ পেন্সিল দিয়ে বিভিন্ন ছবি এঁকে। যেমন নিপুণ হাতে সুস্বাদু ফুচকা বানান তিনি। ঠিক তেমনি তিনি ইতিপূর্বে কাঠ পেন্সিলের মাধ্যমে প্রায় ১শত বিভিন্ন ছবি নিপুণ হাতে অংকন করেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা নেই কিন্তু একজন সাধারণ মানুষের মাঝে এমন প্রতিভা লুকিয়ে আছে এটা দেখে সবাই অবাক।

আমরা জানি প্রতিটি মানুষের মাঝে সুপ্ত প্রতিভা থাকে। শুধু সেই প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ প্রয়োজন। কেউ হয়ত পারে আবার কেউ হয়ত ব্যর্থ হয়। আর যারা পারে তাদের জীবনের গল্পগুলোই হয় অন্যরকম।

আর সেটিই প্রমাণ করলেন প্রতিভাবান চিত্রশিল্পী ঠাকুরগাঁওয়ের ফুচকা বিক্রেতা আব্দুল আজিজ। যিনি শুধুমাত্র কাঠ পেন্সিলের মাধ্যমে তৈরি করেন তার চিত্রকর্ম। এখন সকলের কাছে তিনি শুধু ফুচকা বিক্রেতা না একজন চিত্র শিল্পীও।

ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড়মাঠের পাশে তার অস্থায়ী ফুচকার দোকান। তিনি এই ব্যবসার সাথে জড়িত আছেন ১৯৭৯ সাল থেকে। কাজের অবসরে বসে বসে আঁকতেন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন বিভিন্ন ছবি। তিনি এখন পর্যন্ত ১ শতাধিক ছবি এঁকেছেন শুধুমাত্র পেন্সিলের মাধ্যমে।

চিত্র শিল্পী আজিজের সাথে কথা বললে তিনি জানান,-“আমি নাইট স্কুলে পড়ালেখা করেছি। দিনের বেলা হোটেলে কাজ করে রাতে পড়তে যেতাম। বাবা যুদ্ধে মারা যান। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করত। সংসার মূলত বড় ভাই চালাত।”

পরবর্তীতে ভর্তি হই ঠাকুরগাঁও রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ে যেখানে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করি। মেট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হই। এরপর তিনি ঢাকায় চলে যান। পরবর্তীতে তিনি ঢাকাতে একটি ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতেন ও রাতে পেন্সিল আর কাগজ দিয়ে তিনি ছবি আঁকতেন। ফুচকা বিক্রেতা ছবি আঁকাকে নেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিল, যার দরুন নানা প্রতিকূলতা তাকে দমাতে পারেনি।

ছবি আঁকার অনুপ্রেরণার কোথায় পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন- “ছবি আঁকার আগ্রহ ছিল ছোট থেকেই। আমার বন্ধুরা ছবি আঁকা শিখত ওদের বলেছিলাম আমাকে শেখাতে। কিন্তু ওরা আমাকে বলেছিল তুই তো পড়ালেখা জানিস না তুই আর কি আঁকবি। এই কথাটা শোনার পর আমার মধ্যে একটা জেদ সৃষ্টি হয় যে আমি দেখিয়ে দিব সেই জেদ থেকেই আমার আঁকা শুরু। দেখি আমি ছবি আঁকতে পারি কিনা, মানুষ আমাকে শিল্পী বলে ডাকে কিনা, কাগজ পত্রিকায় শিল্পী নামটা উঠে কিনা দেখি চেষ্টা করে।

তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আসলে কি শিল্পকর্মটা আমাকে খুব ভাল লাগে। কে দেখল, কে কে দেখলনা কি হইলনা এটা আমার আসে যায়না। আমার স্বপ্ন এটা। আমি ঢাকায় এতদিন থাকলে হয়ত ভালো জায়গায় যেতে পারতাম কিন্তু আমি পারি নি সংসারের কারণে, পরিবারের কারণে।” এখন ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বড় করে প্রদর্শনী করতে পারলে আমার সব ইচ্ছে ও স্বপ্ন পূরণ হবে।

আজিজ মামা’র দোকানে ফুচকা খেতে আসা ওমর ফারুক বলেন, আমি ছোট থেকে আজিজ মামা’র দোকানে চটপটি ফুচকা খাই। অনেক মজাদার ও সুস্বাদু তার হাতের ফুচকা। আজ জানতে পারলাম তিনি সুন্দর চিত্র শিল্পী। তার বাসা গিয়ে চিত্রগুলো দেখার পরে মনে হয়েছে এজন্যই এত সুন্দর ফুচকা বানান তিনি। কারণ তার হাত দুটো দিয়ে আকা ছবিগুলো অসম্ভব সুন্দর। একজন সাধারণ মানুষের মাঝে এমন প্রতিভা লুকিয়ে আছে তাকে দেখে বোঝাই যায় নাই।

আরেক ফুচকা খেতে আসা অভিভাবক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আজিজ ভাই এর প্রতিভা হচ্ছে একটি ছাই চাপা আগুন। এটা যে কোন সময় বের হয়ে আসত। আজিজ ভাই এর মত এমন অনেক শিল্পী ঠাকুরগাঁওয়ে আছে যাদের একাডেমিক শিক্ষা নেই কিন্তু সুন্দর আর্ট করেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কাছে ফুচকা-চটপটি বিক্রয় করে তিনি যেমন বিখ্যাত হয়েছেন। ঠিক তেমনি ছবি আঁকার মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে প্রশংসা অর্জন তার ইচ্ছা। আর তার এই ইচ্ছা একদিন পূরণ হবে এমটাই মনে করেন ঠাকুরগাঁওবাসি।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ