স্বাধীনতার ৫০ বছরেও অরক্ষিত রয়েছে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার পাটধারী গ্রামের অন্ধপুকুর গণকবর। সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের এই শোকগাঁথা স্মৃতির চিহ্নটুকু। একাত্তরের নয় মাস দেশের বিভিন্ন স্থানে বধ্যভূমিতে গণহত্যা, লুট আর নারী নির্যাতনসহ হানাদার বাহিনী নির্মম নির্যাতন চালায়।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল পাবনা জেলার কাশিনাথপুর ডাব বাগান নামক স্থানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধে অর্ধশতাধিক হানাদার নিহত হয়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে হানাদার বাহিনী ২৫ এপ্রিল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে কাশিনাথপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথিমধ্যে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল গোল চত্বরের অনতিদূরে চড়িয়া শিকার নামক স্থানে রাস্তায় ব্যারিকেডের মুখে তারা যাত্রা বিরতি করে। সন্ধান পায় চড়িয়া শিকারের পূর্ব দক্ষিণ পাশে অন্য কাশিনাথপুর গ্রামের।
এ গ্রামকেই পাবনা জেলার কাশিনাথপুর ভেবে পাকিস্তান বাহিনী খুঁজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি। তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদরদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী সন্ধান পায় চড়িয়া মধ্যপাড়ায় ডা. শাজাহান আলী, ইয়াকুব আলী ও মোহাম্মাদ আলীসহ অন্যদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ ঘাঁটি। এই ঘাঁটি তছনছ করে দিতে শুরু হয় হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যা। তারা চড়িয়া শিকারসহ আশপাশের ৩-৪টি গ্রামের প্রায় আড়াইশ মুক্তিপাগল মানুষকে আটক করে। পরে দুই লাইনে দাঁড় করিয়ে মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করে।
গণহত্যায় সলঙ্গা থানার পাটধারী গ্রামের গোলাম হোসেন খোন্দকার, আকদুর আলী খোন্দকার, আব্দুর রাজ্জাক খোন্দকার, আলতাফ হোসেন খোন্দকার, জয়নুল আবেদীন খোন্দকার, ময়দান ফকির, আমজাদ হোসেন তালুকদার, বাসু প্রামাণিক, আব্দুস ছামাদ আকন্দ, আব্দুর রশিদ আকন্দ, মোজদার আকন্দ, তাজু আকন্দ, মাহাতাব তালুকদার, খয়রুজ্জামান তালুকদার, আব্দুল কাদের তালুকদার, জোনাব মন্ডল, মুকুল চৌধুরী, ফনি মীর, ননী মীর, তোমেজ খোন্দকার ও নুরু মিস্ত্রী সহ অনেকে শহীদ হন। এসব শহীদের পাটধারী অন্ধপুকুর পাড়ে গণকবর দেয়া হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এ শোকগাঁথা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি গণকবরটি সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ করা হয়নি।
এলাকার সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরে এখানে এসব শহীদের স্মরনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
মওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ছোরহাব আলী খান বলেন, ‘২৫ এপ্রিল গণহত্যায় পাটধারীর ২৯ জন নিরীহ মানুষকে গুলি করে হত্যা করে পাক বাহিনী। এসব শহীদের পাটধারী অন্ধপুকুর পাড়ে গণকবর দেওয়া হয়। শহীদের স্মৃতি আগামী প্রজন্মকে জানাতে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ খুবই জরুরি।’
হাটিকুমরুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর। কিন্তু এখনো এই গণকবরটির কোনো শহীদের স্মৃতি রক্ষা করা হয়নি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, গণকবরটি সংরক্ষণ করে শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করবেন যাতে আগামী প্রজন্ম এ স্মৃতি দেখতে পারে।’
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা তোজাম্মেল হক মাষ্টার বলেন, পাটধারী গণকবরটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে, এতে শহীদের অবমাননা করা হচ্ছে। তাই এসব শহীদদের স্মৃতি রক্ষার জন্য অতি দ্রুত এ গণকবরটি সংরক্ষণ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও শহীদের স্মরণে স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা প্রয়োজন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ