বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালবাসার কারণে দীর্ঘ ছয়মাসের প্রচেষ্টায় রঙ্গিন সুতোয় গাঁথা হাতে বোনা একটি নকশিকাঁথা (বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত নকশীকাঁথা) প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপহার দিয়েছেন গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার কলেজছাত্রী মোছলেমা আক্তার।
বিজয়ের পঞ্চাশ বছর, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এই নকশীকাঁথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ আয়োজন।
কলেজের টিফিন আর ঘর-গৃহস্থলী থেকে সংগৃহীত একটু-আধটু সঞ্চয়ের অর্থ দিয়ে কেনা রঙিন কাপড় আর নানা রংয়ের সুঁতোয় বোনা বঙ্গবন্ধুর ছবি উপহার দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, মনে মনে এমনটাই ইচ্ছা ছিল বলে নয়া শতাব্দীকে জানিয়েছেন মোছলেমা।
এমন আশা পূরণ হওয়ায় মোছলেমা ভীষণ খুশি। সুঁই-সুতোয় কাপড়ে ছবি বোনা তার পেশা নয়। খানিকটা শখের বসে, আর একটুখানি নেশা। আর এই নেশা এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর ভালোবাসার কারণে প্রথমে মিষ্টি কুমড়ার উপর বঙ্গবন্ধু’র মুখাবয়বের চিত্র আঁকেন মোসলেমা।
মোসলেমা আরও জানান, ছোটবেলা থেকেই আঁকা-আঁকির প্রতি তার আগ্রহ ছিল। ইউটিউব, অনলাইন এবং অন্যের ডিজাইন দেখে ছবি আঁকার প্রতি তার আগ্রহ দিন দিন বেড়ে যায়। এভাবেই একটু-আধটু করে তার পুরো ছবি আঁকার কাজ শেষ হয়। তবে তার ছবি আঁকার ক্যানভাসে শুধুই বঙ্গবন্ধু। আর এভাবেই তার এগিয়ে চলা।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম হরিনাথপুর গ্রামের কৃষক মো. মোকছেদুল মন্ডল ও গৃহিনী মোছা. শাহানারা বেগম দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে ছোট মোছা. মোছলেমা আক্তার। জন্ম ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি। গ্রামের বিদ্যালয়েই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে মোছলেমা আক্তার পলাশবাড়ী আদর্শ ডিগ্রী কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। একমাত্র বড় ভাই শামীম মন্ডল মাস্টার্স সম্পন্ন করে বাড়িতে থেকে চাকরির চেষ্টা করছেন।
স্থানীয়রা নয়া শতাব্দীর এ প্রতিনিধিকে জানান, প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরতেই তার এমন উদ্যোগ। এরআগে মৌসুমী ফল তরমুজের উপরিভাগে পেনসিল স্কেচ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আঁকিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রেমি তথা এলাকাবাসীকে তাঁক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মোছলেমা। মোছলেমা মহান স্বাধীনতার সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা দেখেনি। কিন্তু স্বাধীনতার সময় রাজনীতির চড়াই-উৎরাই, সংকট কিংবা ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধুর অবদান সম্পর্কে যা কিছু জেনেছেন পাঠ্যপুস্তুক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন কলাম থেকে। এভাবেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার গভীর ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে।
মোসলেমার বড় ভাই শামীম মন্ডল জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী (মুজিব শতবর্ষ) সামনে রেখে পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমে রঙিন কাপড়ের উপরিভাগে নানা রংয়ের সুঁতো দিয়ে নকশীকাঁথার আদলে মোছলেমা বঙ্গবন্ধু’র ছবি অংকন করেছে। তার ধ্যান-জ্ঞান শুধুই বঙ্গবন্ধু। লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবা-মায়ের সাথে ঘর-গৃহস্থালী কাজে সহায়তার ফাঁকে একটু ফুসরত পেলেই বসে যায় বঙ্গবন্ধু’র ছবি আঁকতে।
তিনি আরও জানান, ‘ছবি আঁকার ক্ষেত্রে মোছলেমার কোন শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই। বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে আন্তরিক অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তার এ ছবি আঁকা। একের পর এক বঙ্গবন্ধু’র মুখাবয়বের ছবি আঁকা যেন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। দোয়া করবেন, তার অদম্য বাসনা আজীবন যেন বঙ্গবন্ধু’র ছবি আঁকা চালিয়ে যেতে পারে।’
মোছলেমা আক্তারের বঙ্গবন্ধু’র ছবি আঁকার এমন প্রতিভার কথা লোক মারফত জানতে পারেন গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী- সাদুল্লাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি। বিষয়টি অবগত হয়ে তিনি মোছলেমাসহ তার পরিবারকে নিজ বাসভবন পলাশবাড়ীতে সাক্ষাতের জন্য ডেকে পাঠান।
এসময় বঙ্গবন্ধু ভক্ত মোছলেমা আক্তার অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপিকে তার হাতে বোনা নকশিকাঁথাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন।
মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মোছলেমার দেয়া উপহার বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত নকশী কাঁথাটি প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী- সাদুল্লাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘মোসলেমা গাইবান্ধার কৃতি সন্তান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার আগ্রহ ও শ্রদ্ধাবোধ অনেক। দেশের এই বিজয় ক্ষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ব্যস্ত রয়েছেন। আমি মোসলেমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, নকশীকাঁথাটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেবো। প্রধানমন্ত্রীর হাতে ছবিটি হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।’
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ