রাজশাহীতে সদ্য ঘোষিত আহবায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে রাজশাহী মহানগরের সকল থানা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ একজোট হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিতর্কিত, নিস্ক্রিয়, অথর্ব ও আওয়ামী এজেন্টে নিয়ে এই কমিটি বলে দাবি করেন তারা। তাই রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির বাতিলের দাবি জানান তারা। এই কমিটি বাতিল না হলে গণপদত্যাগের হুমকী দেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় নগরীর শালবাগান’ শাহ্ মখ্দুম থানা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শাহ্ মখ্দুম থানা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাসুদ।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বোয়ালিয়া থানা বিএনপি’র সভাপতি সাইদুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র আপামর জনতার ভালোবাসার ও কথা বলার গণমানুষের দল। বিএনপি চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন গুরুতর অসুস্থ’ ঠিক এই সময় নবগঠিত রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র বিতর্কিত একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সকলেই রাজশাহী মহানগর বিএনপিসহ মহানগর বিএনপি’র আওতাধীন সকল থানা ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ রাজশাহী মহানগরের সকল ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ এবং বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অসীম ত্যাগ শিকার করে, হাসিমুখে সকল নির্যাতন সহ্য করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আদর্শকে বুকে ধারণ করে দলীয় সকল কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করে আসছে। গত ৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইং হঠাৎ গঠিত হওয়া রাজশাহী মহানগর বিএনপির বিতর্কিত আহবায়ক কমিটির তথাকথিত নেতৃবৃন্দের বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করার লক্ষেই এই সংবাদ সম্মেলন।
আমাদের দলের চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার যখন দিনদিন অবনতি হচ্ছে ঠিক তখনই রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র ৯ সদস্য বিশিষ্ট অচল কমিটি গঠিত হলো কর্মী বিচ্ছিন্ন, দীর্ঘদিন কর্মসূচি বিমুখ, আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী বিতর্কিত ব্যক্তিবর্গ নিয়ে। রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া সদস্যদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন বলা হয় রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা দীর্ঘদিন থেকে সক্রিয় নয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে কোন মামলা মোকদ্দমা নাই। এ থেকে ই বোঝা যায় তিনি কতটা সক্রিয়। এদিকে ২নং যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন রাজশাহী জেলা বিএনপি’র সদস্য, অথচ তাকেও মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে যা এক নেতার এক পদ নীতির পরিপন্থী। আহবায়ক এর ন্যায় তার বিরুদ্ধে কোনো হামলা-মামলা নজির নেই ও দলীয় কর্মসূচিতে দুই যুগের অধিক সময় কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই।
আরেক যুগ্ম আহবায়ক বজলুল হক মন্টু বর্তমানে মহানগরের একটি ওয়ার্ডের বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন এবং তাকে সরাসরি মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক পদে পদায়ন করা হয়েছে। এরূপ পদায়ন দলীয় ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন শিবলী বিগত দিনে দলীয় কোনো প্রকার কর্মসূচিতে উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সাবেক এক বিএনপি নেতার ভাই হওয়ার ‘বিশেষ যোগ্যতায়’ তাকে পদে আসীন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা দাবি করেন, রাজশাহীর প্রবীণ, নিস্ক্রিয় এক নেতা ও তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত, বিএনপির কেন্দ্রীয় এক নেতার যোগসাজশে রাজশাহী মহানগর বিএনপিকে ধ্বংস করতেই অচল, নিস্ক্রিয় ও আওয়ামী লীগ এজেন্ট দ্বারা এই বিতর্কিত কমিটি করা হয়েছে। গত ৫ বছর যাবত ঢাকায় বসে নানান ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রকৃত ও পরীক্ষিত নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে নিস্ক্রিয়, কর্মীবিহীন, বিএনপির নেতৃত্ব তৈরি করার অপকৌশল হিসাবে এই রাজশাহী মহানগর বিএনপি’র কমিটি গঠিত হয়েছে। সরকার চায় বিএনপি দুর্বল হোক এবং আমাদের দলের ভিতরে কিছু ষড়যন্ত্রকারীর চাওয়া একই। যার ফলস্বরূপ এই বিতর্কিত কমিটি বলে উল্লেখ করেন সংবাদ সম্মেলন থেকে। দলকে বাঁচাতে নেতৃবৃন্দ দ্রুত এই কমিটি বাতিল করার জন্য বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান এবং বিএনপি’র মহাসচিব এর দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজপাড়া থানা বিএনপি’র সভাপতি শওকত আলী, মতিহার থানা বিএনপি’র সভাপতি আনসার আলী, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন, সাংগঠনিক সম্পাদক খাজদার আলী, শাহ্ মখ্দুম থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, বোয়ালিয়া থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম মিলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন দিলদার, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইট ও সিনিয়র সহহ-সভাপতি মাইনুল হক হারুসহ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান মহানগর আহবায়ক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নজরুল হুদা বলেন, ‘আহবায়ক কমিটি দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান। তিনি ভাল ববুঝেই এটা করেছেন। আর দলীয় কর্মকাণ্ডে কারো কারো সম্পৃক্ততা নাই কথাটা সত্য নয়। আসলে তাদেরকে দলীয় কোন কর্মকাণ্ডে ডাকা হয়নি। অবহেলা করা হয়েছে। এজন্য তারা দলীয় কর্মকাণ্ডে ছিলেন না। আর আহবায়ক কমিটির সকল কমিটি বিলুপ্তি ও গড়ার এখতিয়ার রয়েছে বলে জানান তিনি।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ