ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চা উৎপাদনে শীর্ষে চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান

প্রকাশনার সময়: ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৫৪

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত চাঁদপুর-বেলগাও চা বাগান। বর্তমানে বাংলাদেশে মানসম্মত চা উৎপাদনে শীর্ষ পাঁচে অবস্থান করে নিয়েছে সিটি গ্রুপের মালিকাধীন এই চা বাগানটি। পাতার ভালো কোয়ালিটি, গুণগতমানসহ ভালো দামের জন্য বেশ সুনাম রয়েছে বাগানটির।

চা ছাড়াও পর্যটকের চাহিদার শীর্ষে এই বাগান। প্রতিদিন দূর দুরন্ত থেকে আগত কয়েক শতাধিক পর্যটকে মুখরিত থাকে বাগান। চির সবুজের বিশাল বিচরণ ক্ষেত্র এই চা-বাগানটি দেশের অর্থনীতিতে যেমন ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। তেমনি পর্যটকের কাছে দর্শনীয় স্পটের জায়গা হিসেবে দখল করে নিচ্ছে।

বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া ইউনিয়ন চাঁদপুরে ৩ হাজার ৪৭২.৫৩ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে উঁচু-নিচু ও ঢালু পাহাড় জুড়ে সারি সারি চা গাছ। শীতের হিমেল হাওয়ায় গাছ গুলোতে গজাতে শুরু করেছে কচিপাতা। আর এই কচিপাতার গাছগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। কেউ কেউ আবার গাছের বীজতলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজে ব্যস্ত। অন্যদিকে চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের চেঁচামেচি। কারণ, বিদ্যালয়ে চলছে লাঞ্চ বিরতি। অনেকে আবার বিরতিতে খেলছে আপন মনে। আবার আগত পর্যটকরা ব্যস্ত নানা ভঙ্গিময় ছবি তুলতে। অনেক পর্যটক ঘুরে দেখছেন পুরো বাগান। চলছে ছোটো-খাটো পিকনিকও।

বিভিন্ন তথ্য মতে জানা যায়, ১৯১২ সালে বাগান টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃটিশ আমলে ভারতের কুণ্ডু কোম্পানি এই বাগানের কাজ শুরু করে। তবে রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, লট চাঁদপুর ও লট হল নামে দুটি লটে বিভক্ত চাঁদপুর-বেলগাও চা বাগানটি ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে মালিকানা অব্যবস্থাপনার সম্মুখীন হয়। ক্রমান্বয়ে বাগানের অধিকাংশ জমি স্থানীয় অধিবাসীদের অবৈধ দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে বাগানটি বেশ কয়েক বছর পরিত্যক্ত ছিল।

১৯৮৫ সালে আবার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্বকে) মাধ্যমে চা-বোর্ড প্রায় ৮ (আট) একর জমির উপর চা-চাষ শুরু করে। অতপর মাত্র ৮ (আট) একর চা-বাগানটি বাংলাদেশ চা-বোর্ড ১৯৯২ সালে মে মাসের ৫ তারিখে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্র অনুযায়ী চাঁদপুর বেলগাঁও চা-বাগানটি ব্যবস্থাপনার জন্য জনাব রাগীব আলীর স্বত্বাধিকারী ব্রাক কোম্পানীর নিকট হস্তান্তর করেন। বর্তমান এই চা-বাগান টি সিটি গ্রুপের মালিকাধীন।

চাঁদপুর-বেলগাঁও চা- বাগান কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা যায়, ক্লোন চা উৎপাদনে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই চা বাগানে প্রতিদিন ৭ শতাধিক শ্রমিক তাদের শ্রমের মাধ্যমে নতুন পাতা উৎপাদনে ট্রেসিং থেকে শুরু করে চা-বাগানের সামগ্রিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে সকল শ্রমিক কর্মচারীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য সার্বিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তা ছাড়াও শ্রমিকদের সন্তানদের পড়া লেখায় আগ্রহী করে তুলতে খোলা হয়েছে চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫০ জন। বর্তমানে প্রতিদিন চা-শ্রমিকরা তাদের কর্মঘণ্টা অনুসারে গড়ে ৪০-৫০ কেজি চা পাতা তুলে থাকেন।

চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক কাজী সোহেল রানা বলেন, সারাদেশে এই চা বাগানের চা পাতার সুখ্যাতি রয়েছে। বর্তমানে উৎপাদন ও মানের দিক দিয়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই চা-বাগান। চট্টগ্রামের এই চা বাগান টি পাতার কোয়ালিটি, গুণগতমান সহ ভালো দামের জন্য বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছে বলেও জানান তিনি।

চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো: আবুল বাশার বলেন, ‘আমাদের এই বাগান চা-উৎপাদনে দেশের অন্যতম শীর্ষে। গুণমতমান এবং ভাল কোয়ালিটি বজায় রেখে কাজ করার কারণে দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে শীর্ষ পাঁচে স্থান করে নিয়েছে বাগান টি। বর্তমানে এই বাগানে ৭০০ শ্রমিক সাড়ে ৩ লাখ কেজি (৩৫০ মেট্রিক টন) লক্ষমাত্রা চা উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছে। তা ছাড়া এখানে সকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ অন্যান্য সার্বিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। এবং শ্রমিকদের সন্তানদের পড়া-লেখায় আগ্রহী করে তুলতে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।’

এ সময় তিনি বাগানের চারদিকে সেফটি বাউন্ডারি, শ্রমিকদের জন্য বাসস্থান এবং চাঁদপুর-বেলগাঁও চা বাগান প্রাথমিক বিদ্যালয় টি জাতীয় করণের দাবি জানান।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ