ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের বেহাল দশা

প্রকাশনার সময়: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ২২:৩২ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:১৬

হবিগঞ্জের ২১ লাখ মানুষের একটি মাত্র চিকিৎসাক্ষেত্র হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল। সম্প্রতি ১’শ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। ডাক্তার, নার্স, স্টাফ, বেড আর ঔষধ সংকটের ফলে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে।

জেলার ২১ লাখ জনসংখ্যার চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালটির।

হাসপাতালটিতে একদিকে যেমন ডাক্তার সংকট অন্যদিকে রয়েছে সিনিয়র স্টাফ নার্স, স্টাফ নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ গাইনি, সার্জারী ও কার্ডিওলজি কিন্তু এসব পদের ডাক্তার এখানে নেই। জরুরি প্রসূতি সেবা পর্যন্ত বাইরে থেকে ডাক্তার এনে দিতে হয়। কর্মরত ডাক্তাররা সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।

সরকারী নিয়ম অনুযায়ী ২৫০ শয্যার হাসপাতালে নূন্যতম ৫৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কাগজে কলমে আছেন মাত্র ২১ জন। এই ২১ জনের মধ্যে আবার ৫ জন রয়েছেন অন্যত্র।

হবিগঞ্জের এই সদর হাসপাতালটিতে দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসকের পদ শূণ্য রয়েছে ৩৬টি। তাছাড়া ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সেটি শুধু নামেই ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। এটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও হাসপাতালে বাড়েনি বেড, ডাক্তার, নার্স বা স্টাফদের সংখ্যা।

জেলার প্রায় ২১ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা দেন মাত্র ১৬ জন ডাক্তার। ৫ জন প্রেষণে অন্যত্র দায়িত্ব পালন করছেন। আর বেতন-ভাতা তুলছেন হবিগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে। ১৬ জন ডাক্তার প্রতিদিন হাসপাতালে সেবা দিচ্ছেন অন্তত ৮ শতাধিক রোগীকে।

এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছেন ডাক্তাররা। এখানে নেই কোন সার্জারি ডাক্তার। জরুরি বিভাগে কর্মরত ডাক্তাররা ওই বিভাগে কাজের পাশাপাশি ৫০-১০০ জন রোগীও দেখছেন তারা। হাসপাতালে জরুরি প্রসূতি সেবা কেন্দ্র চালু থাকলেও গাইনি ডাক্তার স্বল্পতায় নার্সই হয়ে উঠেন একমাত্র অবলম্বন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ডাক্তার সংকটের বিষয়টি জানিয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। সম্প্রতি আবারো চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদিত ৫৭টি পদের মধ্যে ৩৬টি পদই খালি। এ অবস্থায় রোগীদের সেবা দিতে বেগ পোহাতে হয় কর্মরত চিকিৎসকদের।

হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার জানান, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে ডাক্তারের ভয়াবহ সংকট। ১ জন ডাক্তারকে সার্জারি, ওয়ার্ডের নিয়মিত রাউন্ড ডিউটি এবং আউটডোরে রোগী দেখতে হয়। অথচ সার্জারির পর ১ জন ডাক্তারের মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু সময় রেস্ট নিতে হয়।

এখানে ইওসি (জরুরি প্রসূতি সেবাকেন্দ্র) চালু আছে। এখানে ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি সেবা দেয়ার কথা। কিন্তু গাইনি ডাক্তার নেই। প্রতিদিন অসংখ্য প্রসূতি রোগীকে সেবা দিতে হয়। অনেকগুলো ডেলিভারি রোগী থাকেন। সিজারও করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব সেবা দেয়ার জন্য বাহির থেকে ডাক্তার আনতে হয়। অথবা অন্যান্য বিভাগের ডাক্তারদের এসব সেবা দিতে হয়।

এ অবস্থায় রোগীদের সেবাদানে ডাক্তারদের পরতে হয় বিরম্বনায়। জরুরি কয়েকটি পদ পূরণ করা গেলে সেবা কার্যক্রমে গতি আনা সম্ভব হবে।

হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানিরও রয়েছে তীব্র সংকট। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থার জন্য ৪টি টিউবওয়েল থাকলেও অধিকাংশ সময়ই ৩টি-ই বিকল থাকে। সচল টিউবওয়েলটিতেও আয়রনের পরিমাণ এত বেশি যে পানি সাথে পান না করলে সল্প সময় পরেই লাল হয়ে যায়। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে রোগী ও তাদের স্বজনদের অনেককেই ট্যাংকিতে জমানো নোংরা পানি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। আবার অনেকেই বাহির থেকে পানি কিনে ব্যবহার করছেন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকার জানান, ডাক্তার, নার্স, স্টাফ সহ অন্যান্য শুণ্য পদের জন্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই এর সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া টিউবওয়েলগুলো সংস্কার করতে একাধিকবার গণপূর্ত বিভাগে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) রিপন দেব জানান, হাসপাতালের টিউবওয়েল কয়েকদিন আগেও মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো আবারও নষ্ট হয়েছে কি-না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে জানায় নাই।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ