ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজবাড়ীতে অগ্নিকাণ্ডে দেড়শ’ কোটি টাকার ক্ষতি

প্রকাশনার সময়: ১০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:৫১

রাজবাড়ীর সদর উপজেলার আলীপুরে রাজবাড়ী জুটমিলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন জুটমিলের মালিক পক্ষ।

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৬টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট আড়াই ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাজবাড়ী শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী ফরিদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে আলাদীপুর নামক স্থানে অবস্থিত এ মিলটি শতভাগ রপ্তানিমুখী। এ জুটমিল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাটজাতপণ্য ও সুতা রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানে মোট তিনটি বিশালাকৃতির ইউনিট রয়েছে।

১ নম্বর ইউনিটের পশ্চিম দিকে জ্বালানি তেলের ডিপোর কাছ থেকে হঠাৎ আগুনের লেলিহান শিখা দেখে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক রাজবাড়ীর সকল ফায়ার স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। ততক্ষণে আগুন ইউনিটের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে।

অবস্থা বেগতিক বুঝে মিলে সতর্ক ঘণ্টা বাজানো হয়। সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এদিন ভোর ছয়টার মধ্যে তিন ইউনিটের প্রায় তিনহাজার শ্রমিক ডিউটি শেষ করে আগেই বেরিয়ে যায়।

সকাল ৮টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ১ নম্বর ইউনিটের ভেতরে আগুন জ্বলছে। দমকল বাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভানোর জন্য প্রাণবন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আগুনের তাপে দেয়াল ধ্বসে পড়ছে। ভেতরে দেখা যাচ্ছে আগুনের শিখা। চারপাশে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। পুলিশ-আনসার সদস্যরা পাবলিক ঠেকাতে হিমসিম খাচ্ছে।

অগ্নিনির্বাপনে নিয়োজিত ৫টি ইউনিটের প্রধান ফরিদপুর ইউনিট থেকে আসা সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার স্টেশনের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, রাজবাড়ীর ইউনিটগুলো কাজ করার পাশাপাশি অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ফরিদপুর থেকে এখানে হাজির হই। ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও গোয়ালন্দসহ মোট ৫টি দমকল ইউনিট একযোগে কাজ করি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।

আগুনের সূত্রপাতের বিষয়ে তিনি জানান, মিল মালিক বা তাদের কর্মকর্তাদের সাথে কথা না বলে কোন মন্তব্য করা যাবে না। তবে প্রাথমিক ভাবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে অথবা তেলের টাংকি ব্লাস্ট হয়ে আগুনের সূত্র হতে পারে বলে জানান তিনি।

রাজবাড়ী জুটমিলের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আলহাজ্ব কাজী দিদার আহমেদ নয়া শতাব্দীকে জানান, ‘আমি জুটমিলেই ছিলাম। ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ১ নম্বর ইউনিটে আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে ছুটে যাই। আগুনের ভয়াবহতা এতই ছিলো যে, ভবনের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছিলোনা।’

তিনি বলেন, ‘এ ইউনিটে জুটমিলের মূল অফিস ভবন, আবাসিক ভবন, ও জিএম অফিস ছিলো। পুরো অফিস ভবন ভষ্মীভূত হয়ে গেছে।’

কাজী দিদার বলেন, মিলে প্রতিদিন ১৫/২০ লাখ টাকা নগদ থাকে। অফিস রুম পুড়ে যাওয়ায় তার কোন চিহ্ন আবশিষ্ট নেই। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টও পুড়ে গেছে। তাছাড়া মিলের ভেতরে থাকা মূল্যবান বহু মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি আরো জানান, ‘প্রায় দুইশ কোটির টাকার ব্যাংক ঋণে গড়ে ওঠা শতভাগ রপ্তানিমুখী এ মিলে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করে। ২০০৮ সালে নির্মিত এ জুটমিল পরিচালকদের ঐকান্তিক চেষ্টায় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলেছিলাম।’

ক্ষতির বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। এখন দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার পুরা অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং নতুন ভাবে মেশিনপত্র আমদানি করে কাজ শুরু করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে।’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ