রাজবাড়ীর মেধাবী সন্তান ইফতি মোশারফ সকালকে নিয়ে এলাকায় দিনভর আলোচনা। বাড়িতে শোকের পরিবেশ। আত্মীয়-প্রতিবেশিরা বিমর্ষ। সুনসান নিরবতা বাড়ির পরিবেশকে গ্রাস করে রেখেছে।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ৩নম্বর আসামি রাজবাড়ী পৌর এলাকার ধুঞ্চি গ্রামের ফকীর মোশারফ হোসেনের বড় ছেলে ইফতি মোশারফ সকাল।
বুধবার বুয়েট শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। এছাড়াও অপর ৫ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো: কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ইফতি মোশারফ সকাল, বুয়েট ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক ছিলেন। তিনি বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ১৬তম ব্যাচ-এর শিক্ষার্থী ছিলো।
এদিকে, রায় ঘোষণার পর তার তার ধুঞ্চির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নিরবতা। ঘরে সকালের ছোট ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী রাফি মোশারফ স্বপ্নিল অবস্থান করছিলো। সে সময় সকালের মা রাবেয়া মোশারফ রায় ঘোষণার সংবাদে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
পাশের বাড়িতে থাকা সকালের মেজো চাচা আব্দুস সালাম ফকির জানান, আদালতের রায় তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। যে কারণে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তিনি বলেন, ‘ইফতিরা দুই ভাই। ইফতির বাবাও মেধাবী ছাত্র ছিলো। অল্প নম্বরের কারণে তিনি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাননি। যে কারণে ইফতির বাবা বাড়িতে ফিরে এসে জেলা শহরের গোদার বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আতিথি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতার পাশাপাশি ওই স্কুলে ও নিজের বাড়িতে একাধিক ব্যাচ করে শিশু শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতেন। আর ওই কোচিং থেকে তার যে আয় হয় তা দিয়ে তিনি ইফতি ও স্বপ্নিলের লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি সংসার পরিচালনা করে। ইফতি পঞ্চম শ্রেণি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত জিপিএ-৫ পেয়ে এসেছেন। তার ক্লাস রোল কখনোই ১ ও ২ এর বাইরে যেত না। বাড়িতে যত সময় থাকতো পড়া নিয়েই থাকতো। রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন সে। বাড়িতে এলে সে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে যেত আরো কিছু শেখার জন্য। এসএসসি পাস করার পর ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় সকাল। এইচএসসি পাস করার পর মেডিকেল ও বুয়েটে উভয় প্রতিষ্ঠানে সে ভর্তি হবার সুযোগ পায়। কাটা ছেঁড়া করতে হবে ভেবে সে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়নি। সকাল মুরগি জবাই করতেও ভয় পেত।’
তিনি আরো বলেন, ‘যে ছেলে মুরগি জবাইয়ের রক্ত দেখলে আঁতকে উঠতো সে এমন ঘটনায় জড়িয়ে পড়বে তা তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা ভাবতেও পারতেন না।’
এ অবস্থা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি তার বাবা মোশারফ। যে কারণে ঘটনার কয়েক মাস পর ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সকালের বাবা মোশারফ মারা যান। ওই ঘটনার পর থেকে পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলো।
ঢাকায় অবস্থানরত ইফতি মোশারফ সকালের মা রাবেয়া মোশারফ কান্নারত কণ্ঠে বলেন, ‘সকালকে দূর থেকে তিনি চেখের দেখা দেখতে পেরেছেন। কাছে যেতে অথবা কথা বলতে পারেননি। ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত সকালের সাথে তারা দেখা করতে পারেন নি। আদালত যে রায় দিয়েছে তার বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানান তিনি।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ