ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

ঈশ্বরদীতে সার সংকটে দিশেহারা কৃষক

প্রকাশনার সময়: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৯:০৩

চলতি রবি মৌসুমে ঈশ্বরদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে দানাদার সারের সংকট দেখা দিয়েছে। সার সংকটে কৃষকরা তাদের চাষাবাদ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা দানাদার সারের সঙ্গে ইউরিয়াও বোরনসহ অন্যান্য সার নিতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগ, সার ডিলাররা সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে চলতি রবি মৌসুমে সময়মত কৃষকরা সার না পেয়ে রবি শষ্য আবাদ ব্যাহত হতে পারে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রবি মৌসুম ১৬ অক্টোম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৫ মার্চ শেষ হয়। চলতি রবি মৌসুমে এখানে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট ১৭ হাজার ৬২৩ হেক্টর। এর মধ্যে বোরো ধান ২৪৭২ হেক্টর, গম ১৯০০ হেঃ, ভুট্রা ৪৫ হেঃ, আলু ৮৫ হেঃ, শরিষা ৬৩০ হেঃ, পেয়াজ ৭৩৫ হেঃ, রসুন ২১০ হেঃ, মটর ৫৯০ হেঃ খেসারী ১১৩০ হেঃ, মসুর ২৭৭০ হেঃ ও সবজি ৭০৬০ হেক্টর।

জানা গেছে, ঈশ্বরদীতে ১০ জন বিসিআইসির সার ডিলার ও ২১ জন খুচরা সার বিক্রেতা আছে। গত জুলাই মাসে টিএসপি ৩৫ ও এমওপি ৭০ মেট্রিক টন, আগষ্ট মাসে টিএসপি ৪৮ ও এমওপি ৮০ মেট্রিক টন, সেপ্টেম্বর মাসে টিএসপি ৩৫ ও এমওপি ১০৫ মেট্রিক টন, অক্টোম্বর মাসে টিএসটি ১০০ ও এমওপি ১৮০ মেট্রিক টন, নভেম্বর মাসে টিএসপি ১২০ ও এমওপি ২৩০ মেট্রিক টন, ডিসেম্বর মাসে টিএসপি ১২৫ ও এমওপি ২৪০ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের কৃষক আকতার হোসেন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে মসুর, গমসহ সবজি ক্ষেতে বিভিন্ন প্রকার সার প্রয়োগ করতে হচ্ছে। ডিলারদের কাছে গিয়ে সময়মত সার পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাগণ সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দামে সার বিক্রি করছে।’

তিনি বলেন, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা সার সরকার নির্ধারিত মূল্য টিএসপি ১১০০ টাকা ও এমওপি (পটাশ) ৭৫০ টাকা। তবে বাজার থেকে কৃষকদের ক্রয় করতে হচ্ছে টিএসপি ১৪৩০ থেকে ১৪৫০ টাকা ও এমওপি (পটাশ) ৯৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা।

কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত সারের বাজার মনিটরিং না করার ফলে দানাদার সার টিএসপি ও এমওপি সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের বাড়তি টাকা দিয়ে সার ক্রয় করতে হচ্ছে- এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী কৃষকদের।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। ডিলাররা বলছেন খুচরা বিক্রেতারা সারের দাম বেশি নিচ্ছে, তারা সরকার নির্ধারিত মূলে সার বিক্রি করছেন। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররা তাদের থেকে বেশি দাম নিচ্ছে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

সারের বিসিআইসির পৌরসভা এলাকার সার ডিলার মৌসুমী এন্টার প্রাইজের মালিক মাজদার হোসেন বলেন, ‘তার কাছে টিএসপি সার নেই, নভেম্বরের বরাদ্দের সার বিক্রি হয়ে গেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যেই পর্যাপ্ত পরিমান সার আসবে। সার আসলে তিনি টিএসপি সার দিতে পারবেন।’

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মিতা সরকার বলেন, ‘ফসলের জমিতে অপটিমাম ডোজের বেশি সার ব্যবহার করলে সারের সংকট হতে পারে। কৃষকরা প্রয়োজনের বেশি সার ব্যবহার করার ফলে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। ফসলের জন্য অপটিমাম ডোজের বেশি বা কম উভয়ই ক্ষতিকারক। সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০ টি স্থানের মাটি পরীক্ষা করে মাটিতে চাহিদার থেকে তিনগুন বেশি ফসফরাসের মাত্রা পাওয়া গেছে। কৃষকদের আমরা ডিএপি সার ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছি। সারের বাজার নিয়মিত মনিটারিং করা হচ্ছে।’

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ