ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাঁশখালীতে টানা বৃষ্টিতে কৃষকের মাথায় হাত

প্রকাশনার সময়: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৮:১৭

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পাকা ধান, মৌসুমী সবজির বীজতলা, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ টানা বৃষ্টি হওয়ায় মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে কয়েক শত হেক্টর সবজি ও ধান ক্ষেত। পানি নিষ্কাশনের উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় আগাম সবজির ক্ষতির পরিমাণ বেশি। এ ছাড়াও ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় অনেকের কাটা ধান এবং পাকা ধান মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে পচে গেছে বোরো ধানের বীজতলাও। আগাম চাষ হওয়া প্রায় শীতকালীন সবজির গাছ ও চারার গোড়াও পচে গেছে।

অনাকঙ্খিত এই টানা বৃষ্টির কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। ব্যাপক ক্ষতির পরিমাণ এড়াতে কৃষকরা দিনরাত পানি নিষ্কাশনসহ গাছ বাচাঁনোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অধিকাংশ চাষিই বলছেন, টানা ভারী বৃষ্টিতে তাদের বপনকৃত ও রোপনকৃত সব বীজতলা ও গাছ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গণ্ডামারা, বাহারছড়া, চাম্বল, পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালিপুর, বৈলছড়ি, সরল, জলদী, শিলকূপ, পুর্ব পুঁইছড়ির বেশির ভাগ সবজি ক্ষেত মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। গণ্ডামারা ও সরলে আগাম চাষ হওয়া টমেটো ক্ষেতগুলো ডুবে গেছে পানির নিচে, তবে চাষিরা সঠিক সময়ে পানি নিষ্কাশন করার কারণে ক্ষতির পরিমাণ একটু কম। এ ছাড়াও উপজেলা বাহারঁছড়ার উপকূলে ও সাগর চরে চাষ হওয়া খিরা ক্ষেত ও মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। চাষিরা দিনরাত পানি নিষ্কাশন করেও বাঁচাতে পারেনি গাছগুলো, পচে গেছে অসংখ্য বীজতলা, নতুন চারা ও গাছের গোড়া। মাঠে থাকা অধিকাংশ পাকা ধান মাঠেই ঝড়ে গেছে, কিছু কিছু ধান আবার পানিতে ডুুবে থাকার কারণে নতুন করে গজিয়ে

উঠেছে। এ ছাড়াও উপজেলার পাহাড়ী ও উপকূলীয় এলাকায়, মুলা, ডাটা, পালংশাক, লালশাক, ধনেপাতা, বেগুন, মরিচ, লাউ, শিম, ফুলকপি, বাধাকপি, বরবটি, শিমসহ নানা জাতীয় শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার বাহারছড়ার খিরা চাষি ইমাম হোসাইন বলেন, ‘আমি লাভের আশায় বাড়ির পাশের ৩ বিঘা জমিতে খিরা চাষ করেছি। আমার খিরা ক্ষেতে বাম্পার ফলন হয়েছিল। সবে মাত্র খিরা বেচা শুরু করছিলাম। কিন্তু হটাৎ অনাকঙ্খিত টানা চার দিনের বৃষ্টির কারণে আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

একই গ্রামের খিরা চাষি রবিউল আলম বলেন, ‘সাগরে কি একটা তুফান আইলো, এই তুফান আমার স্বপ্নের খিরা ক্ষেতটা ডুবায় দিল। আমি অনেকের কাছ থেকে ধার করে এই খিরা চাষ করেছি। খিরা বিক্রি করে এই ধার সুদসহ পরিশোধ করার কথা ছিল। এখন ত আমার সব শেষ।’

উপজেলার পূর্ব বৈলছড়ি গ্রামের মহিবুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বাৎসরিক আয়ের একটা বড় অংশ আসে এই শীতকালীন সবজি থেকে। আমি বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, এবং শিম চাষ করেছিলাম যা কয়েকদিনের মধ্য বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু টানা বৃষ্টি হওয়ায় এখন শিকড় পচে গেছে। রোদ পেলে বেশিরভাগ সবজি ঢলে পড়বে। এখন রাতদিন এক করে ক্ষেতে কাজ করি। এই বিষ্টিতে আমার বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’

শিলকূপের চাষি আব্দুল কাদের বলেন, ‘এই বছর ২ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। ১ দিন পর ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু হটাৎ বৃষ্টি হওয়ায় ধান আর কাটা হয়নি। এখন সব ধান মাঠে জমে থাকা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেল।’ তিনি আরও বলেন, ‘মনে মনে ভাব ছিলাম এই বছর আর চাল কিনতে হবে না। মনের আশা মনেই রয়ে গেল।’

গণ্ডামারার টমেটো চাষি গিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর ধরে টমেটো চাষ করে আসছি। এরকম বৃষ্টি কখনো দেখিনাই। গত চার দিনের টানা বৃষ্টিতে আমার টমেটো ক্ষেত ডুবে গেছিল। তবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকায় তেমন ক্ষতি হয়নাই।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, ‘এ বছর ধান, শীতকালীন ও আগাম সবজি চাষে বাম্পার ফলন হয়েছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এর প্রভাবে অনাকঙ্খিত টানা বৃষ্টির কারণে পাকা ধান, ধানের বীজতলা, গমের বীজতলা, শীতকালীন সবজিসহ কিছু রবি শস্যের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। তখন ঐ সময়ে আমি ছুটিতে ছিলাম। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।’

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ