ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আমন কাটা ও মাড়াইয়ে মেতেছে নান্দাইলের কৃষক-কৃষাণী

প্রকাশনার সময়: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:২৫

‘‘আমাদের দেশ’’ কবিতায় আ. ন. ম. বজলুর রশীদ লিখেছেন সোনার ফসল ফলে ক্ষেত ভরা ধান, সকলের মুখে হাসি, গান আর গান। মাঠ জুড়ে সোনালী ধানের ম-ম গন্ধে মনের আনন্দে কাজ করছেন কৃষক। কথা বলার মতো ফুরসত নেই তাদের। পাকা ধানের গন্ধে কৃষকদের মন এখন বেশ প্রফুল্লতা। পাকা ধান কাঁটতে হাতে কাচি নিয়ে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।অন্যদিকে মাঠ থেকে নতুন ধান বাড়িতে তোলার জন্য আঙ্গিনা পরিস্কার- পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন কৃষাণীরা। আবার অনেকে কুলা ও ফ্যান দিয়ে ধান পরিস্কারের কাজ করছেন। ধান ঝাড়াই -মাড়াই ও সিদ্ধ করার কাজ করছেন রাত অবধি জেগে। শিশু,বৃদ্ধ কেউ বসে নেই।

নবান্নের আনন্দে আমন ধান কাটার ধুম লেগেছে ময়মনসিংহের নান্দাইলের প্রতিটা এলাকায়। উপজেলায় আমন ধান কাটা মাড়াই চলছে পুরোদমে। মাঠের সোনালী ধান এখন ঘরে তুলতে ব্যস্ত এ অঞ্চলের কৃষকরা। মাঠে মাঠে সোনালী পাকা আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে অনাবিল সুখের হাসি ফুটে উঠেছে। প্রতিটি ক্ষেত যেন সোনালী রঙের চাদর দ্বারা আবৃত। প্রকৃতি যেন সেজেছে হলুদ রঙে।

ধান কেটে অনেক কৃষকই আঁটি বেঁধে কাঁধে করে, আবার অনেকেই বিভিন্ন যানবহনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। ফসলের ক্ষেতে, বাসা-বাড়ির উঠানে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। এসব ধান নিয়ে কৃষকের যেমন ব্যস্ততা তেমনি আনন্দও প্রচুর।

বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে ধান কাটা মাড়াই ও শুকানোর কাজ করতে পারছেন কৃষান- কৃষানিরা। কৃষকের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। ‘ধান কাটার গান’ কবিতায় কবি - লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী লিখেছেন -

ধান কাটা হলো সারা

উঠোনে ধান গোলা ভরা

খুশিতে ওঠে মেতে, চাষীদের মন।

চাষীর গায়ে মোটা কাপড়,

মোটা চালের বাড়ে কদর,

ঢেঁকি পেতে ধান ভানে, কিষান বধূগণ।

এ যেন বাঙালি সংস্কৃতির চিত্র ফুটে উঠেছে নান্দাইলের প্রতিটা গ্রামগঞ্জে।চলতি আমন মৌসুমে ফলন ভালো ও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকও বেশ খুশি।

গ্রাম বাংলায় কৃষকেরা নবান্ন উৎসব পরিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আমন্ত্রণ করার পাশাপাশি ধুমধামে চলছে নতুন চালের পোলাও, ভাপা পিঠা, ও পায়েসসহ রকমারী নিত্য নতুন খাবার তৈরির আয়োজন। গ্রাম্য বধুর জামাইকে সঙ্গে নিয়ে বাপের বাড়িতে নবান্ন উৎসব করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে ২২,৩৬০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রীড ৯০ হেক্টর, উফশী ২১,৩৬৫ হেক্টর এবং স্থানীয় জাত ৯০০ হেক্টর জমি রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২,৬৭৯ মে.টন। এর মধ্যে হাইব্রিড উৎপাদন লক্ষমাত্রা হেক্টর প্রতি ৩.৬২ মে.টন,উফশী ২.৮৫ মে.টন এবং স্থানীয় ১.৬২ মে.টন।

ধানের ন্যায্য মূল্য পেলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে কৃষকদের দ্বিগুনেরও বেশী লাভ হবে বলে জানিয়েছেন বীরকামট খালী গ্রামের কৃষক মো.মুজিবুর রহমান, আ.সাত্তার,হাবিবুর রহমানসহ অনেকেই। খরচ বাদ দিয়ে ধান চাষে এবার লাভ হবে বলে জানান তারা। তবে তারা ধানের ন্যায্যমূল্য দাবি করেছেন সরকারের কাছে।

সরেজমিন দেখা যায, উপজেলার বীরকামট খালী, হাটশিরা, চরকোমরভাঙ্গা, খারুয়া, খড়িয়া, চরউত্তরবন্দ এলাকায় মাঠে মাঠে রোপা আমন ধান কাটতে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।কৃষাণীরা ধান নিয়ে ব্যাস্ত বাড়ীতে।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগের তুলনায় ধানের ফলন ভালই হয়েছে। এবারে তারা ধান ক্ষেতে অতিরিক্ত পার্চিং করায় কম খরচে ধানের ভাল ফলন ঘরে তুলতে পারবে। পাশাপাশি এ পদ্ধতি অনুসরণ করায় পোকা মাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন না হওয়ায় বাড়তি খরচ হয়নি। এতে করে কৃষকের যেমনি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

কৃষকরা জানান, এ বছর ১০ শতাংশ জমিতে রোপা আমন ধানের উৎপাদন হয়েছে ৫-৬ মণ। খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ টাকা। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। সে হিসেবে উৎপাদিত ধান বিক্রি করা হচ্ছে ৬ হাজার টাকার মতো। ফলে সব খরচ বাদ দিয়েও লাভ থাকছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নাদিয়া ফেরদৌসি বলেন,এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষকরা সময়মতো বীজ ও সার পাওয়ায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে । উপজেলার প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে।

নান্দাইল উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন,বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ,সার,এবং কৃষি যন্ত্রাংশ বিতরণ করছেন।তাছাড়া এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক তদারকির কারনে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ