রাজশাহীর ঐতিহ্যে মিশে আছে আম। দীর্ঘদিন থেকে মানুষের মুখে মুখে রাজশাহীর আমের গুণগান শুনা গেলেও এবার লিখিত আকারে ‘দ্য জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিকেশনের’ (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে ফজলি আমের। ফলে ফজলি রাজশাহীর আম এটি আর অস্বীকার করার উপায় নেই। এছাড়া ৫০০ বছরের অধিক প্রাচীন রাজশাহীর বাঘাশাহী মসজিদে ধারণকৃত আমের প্রতিকৃতি জানান দিচ্ছে ফজলি রাজশাহীরই আম। তাই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত পাওয়ার মধ্য দিয়ে রাজশাহীর ফজলি আম এখন বিশ্বের সম্পদ।
পৃথিবীব্যাপী এই আমের চাহিদাও অনেক বেড়ে যাবে। ফজলি আমের জিআই স্বীকৃতি পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নয়া শতাব্দীকে বিস্তারিত জানান রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন।
মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) নয়া শতাব্দীর সঙ্গে আলাপকালে আলীম উদ্দীন বলেন, ‘ইতিহাস ও ঐতিহ্যগত দিক বিবেচনা করে ২০১৭ সালের ৯ মার্চ রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্র থেকে ফজলি আমকে জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে অবশেষে ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর প্রকাশিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্ক তাদের ‘দ্য জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিকেশনের’ (জিআই) ১০ নম্বর জার্নালে এটি প্রকাশ করা হয়। ফজলি আমের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নাম দেওয়া হয় ‘রাজশাহীর ফজলি আম’। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই স্বীকৃতি মিলেছে। এখন আমরা সনদ প্রাপ্তির অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করছি অচিরেই জিআই সনদের কপি আমরা হাতে পাবো’।
আলীম উদ্দীন আরও বলেন, ‘প্রায় ২০০ বছর আগে কলকাতার বাজারে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিল রাজশাহী বাঘার ফজলি আম। এছাড়া বাঘাতে ৫০০ বছরের পুরোনো মসজিদে একটি আমের প্রতিকৃতি রয়েছে যা প্রাচীন লোকদের মতে ফজলি আমেরই প্রতিকৃতি। তাই এই এলাকার ফজলি আমের ঐতিহ্যগত দিক রয়েছে। এজন্য এই এলাকার মানুষের মতে ফজলি আম জিআই পণ্য হওয়া দরকার’।
তিনি বলেন, ‘জিআই হলে একটি পণ্যের ব্যান্ডিং হয় সারা পৃথিবীতে। যার ফলে সে এলাকার সাধারণ মানুষের উৎপাদনের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। আইনগত দিক থেকে রপ্তানি বৃদ্ধি পায় এবং কৃষক ভালো দাম পায়’।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ফজলি আমের জিআই সনদ প্রাপ্তির মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে উৎপাদনের আগ্রহ বাড়বে। কারণ পৃথিবী ব্যাপী এই আমের চাহিদাও অনেক বেড়ে যাবে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যাবতীয় সহায়তা দানে প্রস্তুত। ব্রান্ডিং হওয়ার ফলে এই আমের উৎপাদন আরো বেগবান হবে। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্কের পর আমও ব্রান্ডিং হওয়ায় আমরা আনন্দিত। রাজশাহীর আরো পণ্য ব্রান্ডিং করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা হচ্ছে’।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ