বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় টানা বৃষ্টির ফলে ফসলের ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা। বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ার কারণে আমন খেতের ধানগাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে উপজেলায় আমন, খেসারি ডাল ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। বৃষ্টিতে জনজীবনেরও নেমে এসেছে স্থবিরতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও উপস্থিতি অনেক কম।
মঙ্গলবার সকালে পৌরসভা এলাকাসহ উপজেলার চর চান্দিয়া, মতিগঞ্জ ও মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুইদিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা বাতাসে আমন ধানগাছগুলো মাটিতে নুয়ে পড়েছে। নুয়ে পড়া গাছগুলোর নিচেই বৃষ্টির পানি জমে আছে। কিছু জমিতে কেটে রাখা ধানও দেখা গেছে।
চর চান্দিয়া গ্রামের কৃষক আবুল খায়ের বলেন, এবার আমনের ফলন খুব ভালো হয়েছে। ‘বৃষ্টি আর বাতাসে অনেক ধানগাছ জমিতে নুয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গাছের অর্ধেক ধান নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ধানের খরচ পুষিয়ে লাভ করা কঠিন হয়ে যাবে।
ইসমাইল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, এবার তিনি আড়াই একর জমিতে আমন আবাদ করেছেন। আমনের ফলন বেশ ভালো হওয়ায় অনেক লাভের আশা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তাঁর খেতে পানি জমায় সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। গত শনিবার একজন শ্রমিক নিয়ে কিছু ধান কেটে জমিতে রেখে আসেন। পুরো জমির ধান কাটার পর বাড়িতে আনার পরিকল্পনা ছিল। গতকাল সকাল থেকে কষ্ট করে কিছু ধান বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
পৌরশহরের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, প্রতিদিন গড়ে সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৪০-৫০হাজার টাকা বিক্রি হয়। গতকাল বৃষ্টির কারণে তেমন ক্রেতার দেখা মেলেনি। ব্যবসাও মন্দা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। এতে করে দোকান কর্মচারীদেরও বেতনও হবে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি বছরে ২০ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। আমনে বাম্পার ফলনও হয়েছে। এদিকে উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে খেসারি ডালের আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কাজী শফিউল ইসলাম বলেন, আমন ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়লেও তেমন কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে ডালের আবাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে যে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে আমন ধানের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে এ আবহাওয়ায় আমন খেতে শিশ পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে দুই দিনের বৃষ্টিতে খেসারি ডালের খেতগুলোতে পানি জমেছে, এতে ডালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলায় কি পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে তা নির্ণয় করছেন।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ