ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে শনিবার থেকেই লাগাতারা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ ধমকা হাওয়া বইছে পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল রাঙ্গাবালীতে। এতে এই উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ জনগণ চরম বিপাকে পড়েছে। আমন ধানের উপযুক্ত মৌসুম অনুকূলে থাকলেও ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাতের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন রাঙ্গাবালীর কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্যসূত্রে জানা যায়, এ বছর পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল রাঙ্গাবালী উপজেলায় আমন চাষ হয়েছে ২৮ হাজার ২ শত ৩০ হেক্টর জমিতে। তরমুজ চাষের জন্য এ পর্যন্ত আবাদ হয়েছে ৩৫০ হেক্টর জমি।
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কৃষক মন্নান খান বলেন, ‘আমি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ৩ কানি জমিতে আমন চাষ করেছি। এবার ধান কেটে মাঠে রেখে এসেছি, আনার কোন সুযোগ পাইনি; সব পানিতে ডুবে যাচ্ছে। আর যেই ধানগুলো কাটা হয়নি, মাঠে আছে; সেগুলো বাতাসে এলোমেলো ভাবে নুয়ে পড়ছে। এরকম বৃষ্টি হলে আমার সব শেষ হয়ে যাবে, এখন আল্লাহর উপর ভরসা করে আছি। আমার আর কোন ইনকাম নাই, এই ধান থেকে যা আসে তাই দিয়ে পরিবার চালাই।’
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের তরমুজ চাষি শিহাব ফরাজি বলেন, ‘আমরা চার পার্টনার একসাথে কাউখালীর চরে ১০ কানি জমিতে আগাম তরমুজ চাষ করেছি, অতিরিক্ত প্রফিটের আশায়। কিন্তু আশা এখন দুরাশা। ঘূর্ণিঝড়ের পানিতে সব ভাসিয়ে নিয়েছে।’
এদিকে রাঙ্গাবালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গৃহিণী নূন-নাহার বেগম জানান, ‘আমি ৩০ মণ ধান সিদ্ধ করেছি। আমার স্বামী ঢাকা থাকে। তিনদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। এরকম বৃষ্টি থাকলে সিদ্ধ করা সব ধান পচে যাবে। আমরা না খেয়ে মারা যামু, আল্লাহ আমাগো দিকে একটু তাকান!’
বাহেরচর এলাকার দিনমজুর শহিদুল, অহিদুল, আকতার ও কাইউম জানান, ‘এরকম যদি বৃষ্টি হয় তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। আজ চারদিন ধরে কোন কাম-কাইজ নাই। বাজারের দাম আগুন! আল্লাই জানে কেমনে কি করমু।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম জানান, ‘রাঙ্গাবালীতে ৪৫ শতাংশ আমন ধান কাটা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে ১৬৫ হেক্টর আমন ক্ষেত এবং বেরিবাদের বাহিরে থাকা ১২০ হেক্টর তরমুজ ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। দু’দিন পরে জানতে পারবো কতটুকু ক্ষতি হয়েছে।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ