বন্ধ বিমানবন্দর চালুর জন্য ঈশ্বরদী, পাবনা, নাটোর ও কুষ্টিয়ার মানুষ বেশ কিছুদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল। সরকারের মেগা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং বিদেশীদের পক্ষ হতেও দ্রুত বিমানবন্দর চালুর দাবি জানানো হয়।
অবশেষে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সংস্কার ও পুনরায় চালুর পরিকল্পনা করেছে। গত ২৮ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এ কথা জানিয়েছেন ।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন এবং ২০২০ সালে পুনঃনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বিমানবন্দর চালুর বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও দীর্ঘদিন সরকার এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
পুনঃনির্বাচনে এই আসনে (পাবনা-৪) বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নূরুজ্জামান বিশ্বাস এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি জাতীয় সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে তদবির শুরু করেন।
এরই প্রেক্ষিতে ১৫ অক্টোবর বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সরেজমিনে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন।
জানা যায়, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের জন্য মোট ৪৩৬.৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে ১৪৫.৯১ একর বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দখলে রয়েছে। যাতে বিমানবন্দরের টার্মিনাল বিল্ডিং, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, এপ্রোন, নেভিগেশন এবং সংযোগ সরঞ্জাম, অফিসারদের আবাসিক এলাকা এবং বিমানবন্দরে প্রবেশের রাস্তা রয়েছে।
অবশিষ্ট ২৯০.৭৪ একর জমি বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দখলে রয়েছে। ওই জমি সিএএবি-কে হস্তান্তর করা হলে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সংস্কার করে আবার চালু করা হবে বলে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী উল্লেখ করেন।সড়কপথে দীর্ঘ রাস্তায় যানজট বাড়তে থাকায় মানুষ এখন সময় ও শক্তি বাঁচাতে বিমান ভ্রমণের দিকে ঝুঁকেছে। ফলস্বরূপ, নতুন ক্রস-কান্ট্রি দীর্ঘ দূরত্বের অভ্যন্তরীণ বিমান রুটের উদ্ভব এবং সেগুলোর সবকটিই লোড ফ্যাক্টরগুলির সাক্ষী হচ্ছে। সেই সাথে অব্যবহৃত ঈশ্বরদী বিমানবন্দর পুনরায় চালুর দাবি আরও জোরালো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনামলে পাবনার ঈশ্বরদীতে বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে লোকসানসহ নানা অজুহাতে প্রথম বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি আবার চালু করা হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর পর ২০১৩ সালে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। কিন্তু ৬ মাস ১১ দিন চালু থাকার পর ২০১৪ সালের ২৯ মে আবার বন্ধ হয়ে যায় এটি। তবে মাঝে মধ্যে হেলিকপ্টার ও বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানগুলোকে এটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন বলে জানিয়েছেন বিমান চলাচল খাতের সংশ্লিষ্টরা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের কারণে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার উন্মেষ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পাবনা-৪ (আটঘরিয়া-ঈশ্বরদী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নূরুজ্জামন বিশ্বাস।
এছাড়াও ঈশ্বরদী ইপিজেড, বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, পাবনা সুগার মিল, রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় অফিস, আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিল, সহস্রাধিক হাসকিং চাল কল, অটো রাইস ও ফ্লাওয়ার মিল, অয়েল মিল উল্লেখযোগ্য। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে প্রকল্প কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়িক কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষের যাতায়াত ঈশ্বরদীতে।
এ ব্যাপারে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের হেড অফ মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস এম শফিকুল ইসলাম দেশের অব্যবহৃত এই বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার জন্য সিএএবি-এর সাথে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। যাতে তারা বিমানবন্দরগুলিতে এবং সেখান থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করতে পারে। "যদি সিএএবি ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রানওয়ে মাত্র ৫০০ মিটার প্রসারিত করে, তাহলে আমরা এটিআর ৭২-৬০০-এর মতো ছোট বিমানের মাধ্যমে বিমানবন্দরে এবং সেখান থেকে ফ্লাইট অপারেশন পরিচালনা করতে পারি।"
তিনি দাবি করেন, এই রুটে বিমান ভ্রমণের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। যা বর্তমানে প্রয়োজন।
তবে, বিমানের মার্কেটিং বিভাগের জিএম মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, যতক্ষণ না সিএএবি এই বিমানবন্দরকে সংস্কার করে এবং এয়ারলাইন্সগুলিকে সেখানে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত তারা অব্যবহৃত বিমানবন্দরে এবং সেখান থেকে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করতে পারে না।
যেকারণে সরকার অবশেষে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সংস্কার ও পুনরায় চালুর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ব্যাখ্যা করেছেন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ