লবনের প্রভাবে এলাকায় খাবার পানির সংকট বহু বছরের। গভীর নলকূপগুলোও ওই এলাকায় কাজ করেনা। খাবার পানি সংগ্রহে তাই স্বামী-স্ত্রীর কয়েক কিলোমিটিার পায়ে হেঁটে যেতে হতো। পালা করে পরিবারের সদস্যদের খাবার পানি সংগ্রহ করতে হতো। বর্ষা মৌসুমে মাটির পাত্র বা ড্রামে ধরে রাখা পানি এবং এলাকার মিষ্টি পানির পুকুর বা দিঘিই ছিলো অধিকাংশ মানুষের ভরসা।
আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল কিছু পরিবার পানির চাহিদা মেটাতো বোতলজাত পানি দিয়ে। ৩০ লিটার পানি ৫০ টাকা দিয়ে কিনে আনতে হয়েছে। তবে গ্রামে এখন পানির প্লান্ট বসেছে। সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে রামপাল পাওয়ার প্লান্ট সংলগ্ন বিভিন্ন ইউনিয়নে বিশুদ্ধ পানির এসব প্লান্ট বসানো হয়েছে। তাই সবাই এখন স্বাদু পানি পান করেন।
মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গার বাসিন্দা শান্তি মন্ডল জানান, কয়েক বছর আগে প্রায় ১০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হতো। স্ত্রীর কষ্টের কথা চিন্তা করে পরিবারের কাজ ফেলে তিনি পানি সংগ্রহের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। তবে এখন পাল্টে গেছে সেই চিত্র। গ্রামেই খাবার পানির প্লান্ট বসেছে। তাই এখন আর দূরে যেতে হয় না। শান্তিকেও পানি আনতে হয় না। তার স্ত্রী রূপাই খাবার পানি স্থানীয় প্লান্ট থেকে সংগ্রহ করেন। গ্রামেই পানির প্লান্ট বসেছে তাই সবাই এখন স্বাদু পানি পান করেন।
এলাকায় খাবার পানির দীর্ঘদিনের সংকট নিরসনে কাজ করছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড-বিআইএফপিসিএল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুন্দরবন উপকূলীয় রামপাল ও মোংলা উপজেলার গৌরম্ভা, রাজনগর ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে দেড় বছরের ব্যবধানে ৫টি পানির প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। বিআইএফপিসিএল কোম্পানির সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দাদের লবণ পানির সংকট নিরসনে এসব প্লান্ট স্থাপন করেছে।
এই ৫টি প্লান্টের মধ্যে রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ও রাজনগর ইউনিয়নে ৪টি এবং মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে ১টি প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব প্লান্ট থেকে উপকূলীয় ৩টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার পরিবার খাবার পানির চাহিদা মেটাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের বর্নি-সায়রাবাদে স্থাপিত প্লান্ট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার লাইন পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। একই ইউনিয়নে স্থাপিত আরো একটি প্লান্ট থেকে পানির লাইন টানা হয়েছে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এছাড়া রামপালের রাজনগর ইউনিয়নের কালেখার বেড় এলাকায়ও আরো একটি প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।
এর আগে বিআইএফপিসিএল ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মোংলা উপজেলার বুড়ির ডাঙ্গা এলাকায় প্রথম স্থাপন করে বিশুদ্ধ খাবার পানির প্লান্ট।
বিআইএফপিসিএল’র ডেপুটি ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন) তরিকুল ইসলাম জানান, ৫টি পানির প্লান্ট প্রায় দুই হাজার পরিবার খাবার পানির চাহিদা মেটাচ্ছে। এর মধ্যে মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গার প্লান্ট থেকে প্রায় সাড়ে ৩শ’ পরিবারকে নিয়মিত পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
রামপাল উপজেলার গৌরম্ভার বর্ণি-সায়রাবাদে স্থাপিত প্লান্ট থেকে ২৫০টি পরিবার, গৌরম্ভার অপর একটি প্লান্ট থেকে ২২৫টি পরিবার, রাজনগর ইউনিয়নের কালেখার বেড় এলাকায় স্থাপিত প্লান্ট থেকে ২৫০টি পরিবার এবং একই ইউনিয়নের গোনাবলাই খানজাহান পল্লীতে স্থাপিত পানির প্লান্ট থেকে ২০০ পরিবারের বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছে। অসমোসিস প্রযুক্তির প্রতিটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ঘণ্টায় ১ হাজার লিটার পানি সরবরাহের ক্ষমতা রয়েছে।
বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা নিখিল রঞ্জন রায় জানান, বিআইএফপিসিএল কর্তৃক স্থাপিত পানির প্লান্টগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্য থেকে কমিটি পরিচালনা করে।
একটি কমিটির সভাপতি অনিন্দ জানান, সুফলভোগীদের গ্রাহক হতে হবে। এজন্য বিদ্যুৎ বিল, দারোয়ান এবং প্লান্ট সংস্কারসহ অন্যান্য কাজের নাম মাত্র মূল্য নেয়া হয়। সেই হিসেবে একজন গ্রাহকের প্রতি ২০ লিটার পানির জন্য দিতে হয় ৫ টাকা।
বিআইএফপিসিএ’র প্রকল্প পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম জানান, কমিউনিটি ডেভলেপমেন্ট কাজের অংশ হিসেবে লবণাক্ত প্রবন এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। মাইল স্টোন হিসেবে বুড়ির ডাঙ্গা এলাকায় প্রথম একটি আরও প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী গৌরম্ভা ও রাজনগর ইউনিয়নেও খুব শিগগিরই এ ধরণের পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট বসানো হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদনে গেলে সিএসআর এ বরাদ্দকৃত অর্থে এই এলাকায় ব্যাপক ভাবে বহুমুখি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ