সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদ হত্যা মামলার একমাত্র পলাতক আসামি নোমানের বিরুদ্ধে মাল ক্রোক ও গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল হয়নি এখনো। এমনকি মামলার অন্যতম স্বাক্ষী সুরাইলাল আত্মহত্যা করেছেন। গত ২ নভেম্বর তারিখে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে মাল ক্রোককি পরোয়ানা জারি করা হলে রোববার (৫ ডিসেম্বর) ধার্য তারিখেও তা তামিল হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রায়হান হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এমএ ফজল চৌধুরী। এর আগে গত অক্টোবর মাসের শুরুতে নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও তা এখনো তামিল হয়নি বলেও জানান তিনি
এদিকে এ মামলার একমাত্র স্বাক্ষী সুরাইলাল আত্মহত্যা করেছেন বলেও জানিয়েছেন রায়হানের মা সালমা বেগম। কেবল তাই না, অন্য স্বাক্ষীকেও স্বাক্ষ্য না দিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
রোববার ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সালমা বেগম বলেন, ‘রায়হানকে কাষ্টঘরের সুরাই লালের ঘর থেকে সুস্থভাবে ধরে আনে পুলিশ। তাকে মারধর করে রায়হানকে ধরে আনা হয়। সুরাই লাল হলো প্রথম সাক্ষী। সে নাকি মারা গেছে। এখন আমি শুনছি, কেউ কেউ বলছে, পুলিশও বলছে, সে নাকি আত্মহত্যা করেছে। আমি সঠিক জানি না সে আত্মহত্যা করেছে কিনা বা সে কীভাবে মারা গেছে।’
অপরদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মাল ক্রোকের নির্দেশ গ্রহণ করার কথা জানিয়ে এ ব্যাপারে করণীয় পদক্ষেপ দ্রুত সময়ের মধ্যে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কেএম নজরুল।
তিনি বলেন, ‘নোয়ামানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা আমরা পেয়েছি ৭ অক্টোবর। কিন্তু তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই সে অনুযায়ী আমরা আদালতকে জানাব। আর মাল ক্রোকের যে নির্দেশনা সেটির ক্ষেত্রে বাবা বেঁচে থাকলে মাল ক্রোক করা যায় না যদি না ছেলের নিজের নামে কোন সম্পত্তি থাকে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। দ্রুত সময়ের ভেতর আদালতে প্রতিবেদন পাঠাবো।’
গেল বছরের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটির তদন্তে প্রথমে পুলিশ ছিল। পরে সে বছরের ১৩ অক্টোবর মামলাটি স্থানান্তর করা হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। চলতি বছরের ৫ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আওলাদ হোসেন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ১ হাজার ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
যে ছয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, তাদের পাঁচজনই পুলিশ সদস্য। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটুচন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ।
অভিযুক্ত অপরজন আব্দুল্লাহ আল নোমান, যার বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে। তার বিরুদ্ধে ঘটনার পর ভিডিও ফুটেজ গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত পাঁচ পুলিশ সদস্য কারাগারে থাকলেও নোমান এখনও পলাতক রয়েছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক আবুল মোমেন রায়হান হত্যা মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন। বাদীপক্ষ চার্জশিটের বিপক্ষে নারাজি দেয়নি। আদালত পলাতক নোমানের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ