অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের নাদৌড় গ্রামের পাশে নাদৌড় কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা। প্রতিবছরের অগ্রহায়ণ অমব্যশায় বসে এই মেলা। মূলত এখানে কালি পূজা উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়। তবে নতুন ধান ওঠার পরে হয় তাই কেউ কেউ এ মেলাকে নবান্নের মেলাও বলে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আগমন হয় এ মেলায়
এই মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ মানুষের মধ্য এক অন্য রকম উৎসব আমেজে মুখোর হয়ে ওঠে আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ। নতুন ধান ওঠায় বাড়িতে বাড়িতে শীতের পিঠা পুলি, নতুন ধান থেকে পাওয়া চালের পায়েস রান্না করা হয়।
মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়ীতেই জামাই মেয়ে সহ বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন আসা, চলে খাওয়া দাওয়ার ধুমও।
এক দিনের এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানীরা আগের দিন এসে দোকানে মিষ্টি, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরি নকশি পাতিল, মাটির ব্যাংক, পুতুল, কাঠের তৈরি ফার্নিচার, কসমেটিক, খেলনা, বাঁশি, বেলুন, ঘুর্নি, লোহার তৈরি হাঁসুয়া বটি, চাকু,কাগজের ফুল নানা রকম মুখরোচক খাবারের দোকান দিয়ে নানান জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন। এখানে মাটির তৈরি হাড়ি,পাতিল, ঢাকোন, প্রদীপ দেওয়া ছোট বাটি, ধুপ জালানো ধুপতীসহ নানা রকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি হয়।মেলাতে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতে আসা সুধির পাহান জানান, সারা বছর আমাদের খুব কষ্টে দিন কাটে। এই সময়টা আমরা বিভিন্ন গ্রামের মেলায় বাঁশের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করি। মেলাতে আমরা বাঁশের তৈরি কুলা, ঢাকনা, ঝাল ডালা,খইচালা, চালুন, মাছ রাখা খলইসহ বাঁশের তৈরি নানা উপকরণ বিক্রি করি। প্লাস্টিকের পণ্য বাজারে আসায় আমাদের আয় কমে গেছে।
গ্রামের পাশে মেলা হওয়ায় সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে গ্রামীণ নারীদের কেনাকাটা, বিশেষ করে মাটির ও বাঁশের তৈরি জিনিস ও কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভিড়। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের মেলায় আগমন ঘটে।
মেলা দেখতে আসা তিথি রানী জানান করোনার করনে দীর্ঘদিন এলাকায় কোন মেলা বসেনি মেলায় এসে আমার খুব ভাল লাগছে কসমেটিক কিনেছি জিলাপি কিনেছি খুব মজা করেছি।
মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী সনজিৎ কুমার জানান, বাবা দাদার আমল থেকে থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। তবে ১৯৯৭ সাল থেকে এই মেলা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে হয়ে আসছে নাদৌড় সর্বজনীন কালী মন্দির কমিটির সদস্যরা এই মেলার আয়োজন করে থাকি। এখানে ১৬ উচ্চতার কালী মাতার প্রতিমা তৈরি করা হয়। এ দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা অগ্রহায়ণ আমবশ্যা উপলক্ষে কালি পূজা অর্চনা করেন এখানে। ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আসেন এ মেলায়।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ