দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় রংপুর জেলা যুবলীগের দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্র থেকে একাধিকবার সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন রংপুর জেলা যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তারা জেলা যুবলীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। সেই সাথে দ্রুত সময়ের তা বাস্তবায়ন করারও দাবি জানান।
নেতাকর্মীরা বলেছেন, নেতৃত্ব বিকাশ এবং সংগঠনে গতিশীলতা তৈরিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরির বিকল্প কিছুই নেই। রংপুর জেলায় সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
রংপুর জেলা যুবলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর এইচএম রাশেদুন্নবী জুয়েলকে আহবায়ক করে ৩১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। সেই আহবায়ক কমিটি গঠনের সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও দলীয় কার্যক্রমে কোন গতি আনতে পারেনি। জেলায় সম্মেলনতো দুরের কথা উপজেলা পর্যায়েও কমিটি দিতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে তৎকালীন যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ২০১৮ সালের ১৪ মে জেলার আহবায়ককে অগঠনতান্ত্রিকভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কারণ দর্শনানোর নোটিশ দিয়ে রংপুর জেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। সেই সাথে জেলার রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর ও তারাগঞ্জ উপজেলার কমিটিও বাতিল ঘোষণা করা হয়। তৎকালীন যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে এসব তথ্য জানানো হয়।
এর পরেই ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইলে এক সড়ক দুর্ঘটনায় জেলা যুবলীগের আহবায়ক এইচএম রাশেদুন্নবী জুয়েল মারা যান। সেই থেকে জেলা যুবলীগের কমিটি স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। কেন্দ্র থেকেও কমিটির স্থগিত আদেশ প্রত্যাহার কিংবা অন্য কাউকে দায়িত্বও দেয়া হয়নি। এতে অবস্থায় বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অন্যতম সহযোগী সংগঠন যুবলীগ রংপুরে প্রায় ৩ বছরের বেশী সময় ধরে কমিটি বিহীন অবস্থায় চলছে। তবে স্থগিত কমিটির নেতারা নিজেদের পদ বহাল দাবি করে মাঝে মধ্যে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেন। এ নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তারা জানান, কেন্দ্রীয় কমিটি রংপুর জেলা যুবলীগের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। সেই স্থগিতাদেশ আজও প্রত্যাহার করেনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ। তার পরেও জেলা যুবলীগে অনেকেই আহবায়কসহ বিভিন্ন পদ দাবি করে আসছেন। যা সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। এ নিয়ে যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।
এদিকে দলের নেতাকার্মীরা আরও জানান, রংপুর জেলা যুবলীগের কমিটি নেই প্রায় ৩ বছরের বেশী সময় ধরে। এমন চিত্র জেলার অধিকাংশ উপজেলায়। পদ-পদবী কিংবা কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীরাও খুব একটা দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে চান না। এ কারণে জেলাসহ উপজেলায় তেমন একটা দলীয় কর্মসূচী পালনও হয় না। এর ফলে জেলা যুবলীগের দলীয় কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ঝিমিয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। দলীয় সংকট উত্তরণে জেলায় দ্রুত কমিটি গঠনের দাবি তোলেনও তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব, কর্মী বান্ধব এবং সরাসরি ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা নেতাদের জেলা যুবলীগের কমিটিতে শীর্ষপদে রাখলে দলের কার্যক্রমে গতি আসবে।
জেলা যুবলীগের কয়েকজন নেতা জানান, সম্মেলন দেয়া অথবা নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় কমিটির। তারা চাইলে সম্ভব। এজন্য অবশ্য স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের ভূমিকাও রাখতে হবে। তবে নেতৃত্ব বিকাশের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদে সম্মেলন বা কমিটি গঠন হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
দলের একটি সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারী ও ১৯ মার্চ কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতারা রংপুর সফরে আসেন। এসময় তারা পৃথকভাবে কর্মীসভা ও বর্ধিতসভা করেন। সেসময় নতুন কমিটি গঠনের দাবি তোলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও তাতে সায় দেয়। তারা কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে রংপুর জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন বিষয়ে আলোচনা করবেন বলেও আশ্বাস দেন। কিন্তু দির্ঘদিনেও নতুন কমিটি গঠনের উদ্যাগ দেখা যায়নি।
রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক আশিকুর রহমান সোহেল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য এসএমএন চন্দন রায় ও শ্যামল গোস্বামীসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জানান, তারা ইতোমধ্যে পড়াশুনা শেষ করেছেন। এর ফলে ছাত্রলীগের রাজনীতিও শেষ হয়েছে। ফলে তারা সবাই সাবেক ছাত্রনেতা। এখন যুবলীগ করছেন। কিন্তুু দীর্ঘদিন ধরে জেলায় যুবলীগের কমিটি না থাকায় তারাও কোন পদ-পদবী পাননি। তাদের মতো আরো অনেক সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের এমন অবস্থা। তাই তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের দাবি জানান।
রংপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সাবেক সদস্য মাসুদ রানা বিপ্লব জানান, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কমিটি চায়। আমরাও চাই নতুন কমিটি হোক, নতুন নেতৃত্ব তৈরি হোক।
রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকুল জানান, আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি শেষে যুবলীগ করেছি। রংপুর জেলায় দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের কমিটি নেই। একারণে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। এতে অনেক প্রতিভা অকালেই ঝরে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ করা অনেক নেতাকর্মী ঝিমিয়ে পড়েছে। জেলায় যুবলীগের কমিটি গঠন করে সাবেক ছাত্রনেতাদের মূল্যায়নের দাবি জানান তিনি।
রংপুর জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ওয়াসিমুল বারী শিমু ও শিপন আহমেদ জানান, জেলা যুবলীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন। সবাই চায় ত্যাগী ও কর্মীবান্ধব নেতারা কমিটিতে যেন স্থান পান।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ