ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কমছে কৃষি জমি, উৎপাদনে ঘাটতির আশঙ্কা

প্রকাশনার সময়: ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৩৮

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার দু’পাশে তাকালে দেখা যায় ফসলি জমিতে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বড় বড় কোম্পানির সাইনবোর্ড। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি ফসলি জমিতে গড়ে তুলেছে শিল্পকারখানা। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে আবাদি কৃষি জমি।

ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় উদ্বেগজনকভাবে ফসলের উৎপাদনও কমে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এতে আগামী এক দশক পর মিরসরাইয়ে খাদ্য উৎপাদনে চরম ঘাটতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সময় উপজেলা সমন্বয় সভায় সাবেক মন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কৃষি জমি কমে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় ফসলি জমি রক্ষায় আবাদি কৃষি জমির মাটি কাটা ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তিনি।

মিরসরাই কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২০১০ সালের দিকে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫০৫ হেক্টর। এসব জমির মধ্যে প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আমন, ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ও ৪ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হতো। এসময় ফসলের উৎপাদন ছিল প্রায় ৮৬ হাজার টন ধান।

গত এক দশকে আবাদি কৃষি জমি প্রায় দুই হাজার হেক্টরের বেশি কমে তা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৪০০ হেক্টর। এসব জমিতে আমন, আউশ ও বোরো উৎপাদন হয় ৮৫ হাজার ৮৩৬ টন।

মিরসরাই পানি ব্যবস্থাপনা ফোরামে সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. জামশেদ আলম বলেন, ‘অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণের ফলে এরই মধ্যে আমাদের অনেক কৃষি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও অনেকে জমি কিনে নিচ্ছেন শিল্পকারখানার জন্য। এ কারণে আগামী কয়েক বছর পর খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’

মিরসরাই উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম জানান, মিরসরাই উপজেলায় জমির পরিমাণ যেভাবে কমছে, আগামী এক দশক পর খাদ্য উৎপাদনে চরম ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কৃষি জমিতে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা নির্মাণ করার কারণে ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গত এক দশকে কৃষি জমি ভরাট করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে পেট্রলপাম্প, সিএনজি স্টেশন, ইটভাটা, স্টিল মিল, পোল্ট্রি হ্যাচারি, পোল্ট্রি ও ফিশ ফিড কারখানাসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি।

উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রায়পুর বিল, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের ওয়াহেদপুর বিল, খাইয়াছড়া ইউনিয়নের পোলমোগরা, নয়দুয়ার এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বড় বড় বিলে জমি কিনে সাইনবোর্ড দিয়েছেন শিল্প মালিকেরা।

এদিকে উপজেলার ইছাখালী, সাহেরখালী ও মঘাদিয়া ইউনিয়নে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠার কারণে কয়েক হাজার কৃষি জমিতে শিল্প কারাখানা গড়ে উঠেছে। ওখানকার অনেক কৃষক এখন চাষাবাদ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, আমরা বাপ-দাদার জমি চাষ করে জীবন-সংসার চালিয়েছি। আমাদের জমি অধিগ্রহণ করে শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। এখন আমরা কীভাবে জীবন-যাপন করবো বুঝতে পারছি না।

জমি বিক্রি করা একাধিক মালিক জানান, সিন্ডিকেটের সদস্যরা বাজার মূল্যোর চেয়ে বেশি দাম দিয়ে বিলের এক দিক থেকে জমি কেনা শুরু করে। যারা প্রথমে জমি বিক্রি করতে রাজি হয় না তারা পরে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জানান, প্রতি বছরই মিরসরাইয়ে আবাদি কৃষি জমি কমছে। আইনের বাধ্যবাধকতা না থাকায় আমরা কৃষি জমি রক্ষায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছি না।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ