ফেনীতে চিকিৎসকের অবহেলায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে সাবরিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ। রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গাইনী বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ডা: সায়েরা শরীফা শিল্পী ওই গৃহবধূর সিজারিয়ান অপারেশন করেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা ফেরদৌস আক্তার বাদি হয়ে ফেনীর সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ফেরদৌস আক্তারের লিখিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, তার মেয়ে সাবরিনা আক্তার দীর্ঘদিন থেকে ডা: সায়েরা শরীফা শিল্পীর চিকিৎসা নিয়ে আসছে। গত ৪ নভেম্বর প্রসব বেদনা উঠলে ডাক্তারের পরামর্শে শহরের ডায়াবেটিস হাসপাতালে ভর্তি হয়।
প্রায় ৫ ঘণ্টা পর রাত পৌনে ১টায় সিজার করতে অপারেশন রুমে নিয়ে যায় হাসপাতালে কর্মরত লোকজন।
সাবরিনার স্বজনরা জানান, ডা: সায়েরা শরিফা শিল্পী অপারেশন রুমে প্রবেশের ৫ মিনিটের মধ্যে বের হয়ে চলে যান। অপারেশন করার ৫ দিন পর রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরদিনই তার তীব্র পেটে ব্যাথা, সেলাইয়ের স্থানে পুঁজ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে অচেতন হয়ে পড়ে। তাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তবরত চিকিৎসক ডা: আফরোজা ভর্তি হয়ে সাবরিনার আল্টাসনোগ্রাফী ও রক্তপরীক্ষা করতে পরামর্শ দেন।
এসময় হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাফীর চিকিৎসক ডা: দেবশ্রী চক্রবর্তী রোগীকে আল্টাসনোগ্রাফী করে জানান, রোগী সাবরিনার পেটে গর্ভফুল ও কিছু রিটোনিড প্রোডাক্ট রয়েছে বলে রিপোর্ট প্রদান করে। রিপোর্ট অনুযায়ী রোগীকে পুনরায় অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে বলে জানানো হয়।
সাবরিনার স্বামী শুভ জানান, তিনি একটি অনলাইন কোম্পানিতে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। ধারদেনা করে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করেছেন। পুনরায় অপারেশন করাতে হলে হাসপাতালের খরচ দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডা: সায়েরা শরিফা শিল্পী অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, রোগী সিজারিয়ান অপারেশনের পর সুস্থ হয়ে বাসায় চলে গেছে। অন্য কোন শারিরীক সমস্যার কারনে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে পেটে গজ রাখার কথা সঠিক নয় বলে তার দাবি।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা: রফিক উস ছালেহীন সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
ফেনী ডায়াবেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তবে রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে স্বাস্থ্য বিভাগের গঠিত কমিটিকে যেকোন প্রকার সহযোগিতা করা হবে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ