কক্সবাজার শহরের প্রবেশমুখ কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল সংলঘ্ন ঝিলংজার লারপাড়ায় পাহাড় কেটে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। এভাবে পাহাড় কেটে একের পর এক বহুতল ভবন গড়ে উঠলেও দায়সারা ভূমিকা নিয়ে ‘কর্মতৎপর’ রয়েছে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ। মাঝে মাঝে শহরের আনাচে কানাচে ছোটোখাটো কিছু অভিযান চালাতে দেখা গেলেও রীতিমত রহস্যজনকভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও বিত্তশালী দুস্কৃতিকারীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে একটু সামনে এগিয়েই পাহাড় কেটে ভবনটির নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে ১৫/২০জনের একদল শ্রমিক নিয়মিত পাহাড় কেটে ভূমি সমতল করার কাজ করছেন। আর কিছু শ্রমিক বহুতল এই ভবন নির্মাণে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে। ভবনের ভিত্তি দেওয়া হয়েছে দশ তলার। এছাড়াও পাহাড় থেকে কর্তনকৃত মাটি ঠেলাগাড়ি ও ডাম্পার যোগে দিনে ও রাতে অন্যত্রে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। সরিয়ে ফেলা হচ্ছে পাহাড় কাটার সমস্ত আলামত।
কর্মরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মাহবুবুর রহমান মাবু নামে এক ব্যক্তি ভবনটি নির্মাণ করছেন। এটি কমপক্ষে দশতলা সমপরিমাণ উঁচু হবে। ব্যবহৃত হচ্ছে ৬ থেকে ৮সুতা সাইজের রড। এছাড়াও এভাবে অনিয়ন্ত্রিত পাহাড় কাটার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে আশপাশের প্রতিবেশীর কাঁচা ঘরবাড়ি ও বসতভিটা। যেকোনো মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এমনিতেই জেলায় পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানীর ঘটনা নেহাতই কম নয়।
স্থানীয়রা জানান, ভবনটি যেখানে নির্মিত হচ্ছে সেখানে কোনো ধরণের সমতল ভূমি ছিলো না। সম্পূর্ণরূপে একটি পাহাড়কে কেটে ধ্বংস করে এই ভবনটি নির্মিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাবু এ ধরণের জঘন্য অপরাধে লিপ্ত রয়েছে বলে তাদের মন্তব্য। একাধিকবার সেখানে ককক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের লোকজন অভিযানে এসেছিলো কিন্তু এরপরও মাবুর এমন ধ্বংসযজ্ঞ থেমে থাকেনি। দিনের পর দিন কেটে কেটে বিশাল একটি পাহাড় ধ্বংস করে দিয়েছে। এভাবে করে সে এখন পর্যন্ত ওই পাহাড়ের ১০ শতক জায়গা সমপরিমাণ মাটি সরিয়ে সমতল করে ফেলেছে। অথচ প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টো এখন শোনা যাচ্ছে তাকে নাকি সেখানে ১০তলা উঁচু ভবন নির্মাণের অনুমোদনও দিয়েছে কউক।
স্থানীয় সচেতন মহলের গুরুত্বর অভিযোগ, প্রশাসন যদি এভাবে নির্লিপ্ত থাকে, বেআইনি কাজকর্মের বিরুদ্ধে যথাযত এ্যকশনে না যায় তাহলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। প্রশাসনের উচিত অনিয়মের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় থেকে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিই ভবনটি নির্মাণ করছেন বলে স্বীকার করেন। পাশাপাশি ভবন নির্মাণে ছোটোখাটো কিছু অনিয়ম সবখানেই হয়ে থাকে এমন দম্ভোক্তি করে আরও দাবী করেন কউকই তাকে এই ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে।
তবে কউকের ইমারত শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু জাফর রাশেদ বলছেন, ‘কউক খাস জমিতে কাউকে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিতে পারে না। এছাড়াও কক্সবাজার শহরে আইনগত ভাবে ১০তলা ভবন নির্মাণের সুযোগ নেই। যদি কেউ কর্তৃপক্ষের নাম ভাঙ্গিয়ে এমনটি করে থাকে তাহলে প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কউকের নকশা অনুমোদন শাখার প্রধান কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার রিশাদুল জানান, মাবু একটি আবেদন করেছিলো। কিন্তু তার কাগজপত্র সঠিক না থাকায় এবং সংশয়পূর্ণ হওয়ায় তাকে এখনও ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে কীভাবে সে অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ করে যাচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, ‘বিষয়টি মাত্র অবগত হয়েছি। খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক শেখ নাজমুল জানান, পাহাড় কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযুক্ত মাবুর পাহাড় কর্তনের বিষয়ে যথাযত প্রমাণ সংগ্রহ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ