ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বেসরকারি নৌযানের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য!

প্রকাশনার সময়: ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০১

বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের লাগাতার উদাসীনতা আর অবহেলায় বরিশাল-ঢাকা রুটের রাষ্ট্রীয় নৌ পরিবহন ষ্টীমার প্রায় বন্ধ ও বেসরকারি লঞ্চের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। এছাড়াও রাজধানীর সাথে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌ নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অতি সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পরেই সরকারকে চাপে রেখে বেসরকারি নৌযান মালিকরা বরিশাল-ঢাকা নৌ পথে ডেক শ্রেণীর ভাড়া ২০০ টাকা থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায় বৃদ্ধি করেছে। অথচ রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটিসি’র ষ্টীমারে ভাড়া ১৭০ টাকা। কিন্তু সংস্থাটি ভাড়া বৃদ্ধি না করলেও সাধারণ যাত্রীরা সে সুযোগ ভোগ করতে পারছে না।

একাধিক নৌযান বসিয়ে রেখে সংস্থাটি দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী ষ্টীমার সার্ভিসটি পরিচালন করছে সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন। নানামুখী উদাসীনতায় রাষ্ট্রীয় বিআইডব্লিউটসির দৈনিক রকেট ষ্টীমার সার্ভিস এখন সপ্তাহে ৩ দিন চলছে। অথচ এ রুটের জন্য ৩টি প্যাডেল জাহাজ ছাড়াও ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সংগ্রহ করা দুটি আধুনিক নতুন নৌযান রয়েছে সংস্থাটির হাতে। নানা অজুহাতে সংস্থাটির হাতে থাকা ব্যয় সাশ্রয়ী ‘পিএস টার্ণ’, ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস মাহসুদ’ বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে পিএস মাহসুদ প্রায় দেড় বছর বসিয়ে রাখার পরে গত এপ্রিল মাস থেকে সংস্থাটির ডকইয়ার্ডে মেরামতে রয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি নৌযানটি যাত্রী পরিবহনে ফিরবে বলে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন।

সংস্থার অপর প্যাডেল নৌযান ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ বিনা দরপত্রে এক ব্যক্তিকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দিয়ে গেছেন সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী। রেলওয়ে থেকে সংগ্রহ করা অপর যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি সোনারগও’ একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটসি’র কাছ থেকে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যটন করপোরশেনের কাছে পুনরায় ইজারা দিয়েছে। জনগণের অর্থ কেনা এসব নৌযান সাধারণ মানুষের পরিবর্তে কতিপয় ব্যক্তির বাণিজ্য সহায়ক হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অনিয়মিতভাবে।

এমনকি ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের নতুন দুটি ব্যয়বহুল নৌযানে প্রতি ট্রিপে ৩-৪ লক্ষ টাকা লোকসানের কারণেও সার্ভিসটি সম্প্রসারণ করছে না সংস্থাটি। আর নিয়মিত সার্ভিস না থাকায় সাধারণ মানুষ ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় এ সংস্থার নৌযানে ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অথচ এরুটের জন্য নির্ধারিত ব্যায় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলো দীর্ঘদিন নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সহ বাণিজ্যিক পরিচালন না করে বসিয়ে রাখা হয়েছে।

এক্ষেত্রে প্রায় ৮০ বছরের পুরানো প্যাডেল জাহাজ চলাচলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর সার্ভে সনদ দিতে চাচ্ছে না বলে জানাচ্ছে সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু এখানে দায়িত্বশীল মহল একটি বাস্তবতা এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংস্থার হাতে থাকা এ ৪টি প্যাডেল জাহাজই ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সালে প্রথমবার পরিপূর্ণ পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন ছাড়াও ১৯৯৫-৯৬ সালে দ্বিতীয়বার পুনর্বাসন করা হয়েছে। এসময়ে বাষ্পীয় প্যাডেল হুইলের এসব নৌযানগুলোর খোল ও তলা থেকে উপরি কাঠামোর সম্পূর্ণ পরিবর্তন ছাড়াও নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ গীয়ার পরিবর্তন করা হয়। ফলে ৮০ বছরের পুরনোর তকমা কতটা গ্রহণযোগ্য সে বিষয়টি বিবেচনার দাবী রয়েছে ওয়াকিবাহল মহল থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির একাধিক কারিগরি বিশেষজ্ঞ এসব নৌযান ভারি মেরামত সহ প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন করে আরো নুন্যতম ২৫ বছর যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব বলেও মত প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, পিএস মাহসুদ পরিপূর্ণ মেরামত করে আগামী মাসে যদি যাত্রী পরিবহনে ফিরতে পারে, তবে ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ন’ এর ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? পাশাপাশি ‘পিএস অষ্ট্রিচ’ নৌযানটির ইজারাও অবিলম্বে বাতিল করে যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে ওয়াকিবাহল মহল থেকে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র পরিচালক-বাণিজ্য আশিকুজ্জামানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি ৪টি প্যাডেল জাহাজ ব্যয় সাশ্রয়ী এবং যাত্রী বান্ধব বলে স্বীকার করে পুনর্বাসনের মাধ্যমে চলাচলের বিষয়টির সাথে ব্যক্তিগতভাবে একমত পোষণ করেন। সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ও জিএম ইঞ্জিনিয়ারিং মো. গফুর সরকার প্যাডেল ষ্টীমার পুনর্বাসনের মাধ্যমে পরিচালনের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে সময় সুযোগমত কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ