ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে 

মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ফেরিওয়ালা বিমল পাল হাঁটবেন ৫০ কি.মি. পথ

প্রকাশনার সময়: ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:৩০

প্রায় সাত বছর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল শুরু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প ফেরি করা। প্রথমে তিনি ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র নদের পারে জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার পাশের জয়নুল পার্ক আর বিপিন পার্কে গল্প বলতেন। পার্কে বেড়াতে আসা শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী মানুষকে ডেকে এনে তিনি শোনাতেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প।

এরপর বছর চারেক আগে তিনি শুরু করেন স্কুলে স্কুলে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা। গল্প বলার সময় তিনি সঙ্গে রাখতে একটি সাদা বোর্ড। শিক্ষার্থীরা কখনো গল্প বুঝতে না পারলে তিনি বোর্ডে মুক্তিযুদ্ধের পরিবেশ এঁকে, কখনো উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম দিক এঁকে যুদ্ধের বর্ণনা দিতেন।

এভাবে তিনি ময়মনসিংহ জেলা শহরের প্রায় সব স্কুলেই বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের গল্প। এরপর শুরু করেন উপজেলা পর্যায়ের স্কুলে গল্প বলা। বিমল পাল ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে আমি সবচেয়ে বেশি সুখ পান। কেউ আমন্ত্রণ জানালে দেশের যেকোনো জেলায় গিয়ে গল্প বলতেও তিনি রাজি।

গল্প বলা ছাড়াও বিমল পাল লিখেছেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের তেলিখালী যুদ্ধের ওপর ছোট একটা বই। ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চের মতো জাতীয় দিবসগুলোয় তিনি যখন ঘর থেকে বের হন, তখন ওই ঝোলায় থাকে সেই বই।

তবে এবার গল্প নয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ৫০ কিলোমিটার পথ হাটবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তিনি এবার সেই হালুয়াঘাট থেকে ময়মনসিংহ নগরী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার পথ হাঁটার ঘোষণা দিয়েছেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে তিনি এ পদযাত্রা করবেন বলে জানিয়েছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস। ওই দিন রাতে তিনি এ পদযাত্রা শুরু করবেন বলে জানান তিনি।

এখন ৭০ ছুঁই ছুঁই করছে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পালের বয়স । ১৯৭১ সালে তিনি ভারতের মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার তেলিখালিতে যুদ্ধ করেছিলেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল বলেন, ৫০ কিলোমিটার হাঁটার জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তিনি স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত হেটে থাকেন। ফলে দীর্ঘ সময় হাঁটার অভ্যাস হয়েছে। তবে হালুয়াঘাট থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার হাঁটা স্বাভাবিক হাঁটা নয়। এর প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি তিনি প্রতিদিন সকালে চার ঘণ্টা করে হাঁটছেন।

গত ২৬ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে তিনি ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা পর্যন্ত অন্তত ২৫ কিলোমিটার হেঁটেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ময়মনসিংহ থেকে মুক্তাগাছা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার হাঁটার পর ৫০ কিলোমিটার হাঁটার সাহস পাচ্ছি।

৫০ কিলোমিটার হাঁটার পরিকল্পনা সম্পর্কে বিমল পাল বলেন, ১০ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে হাঁটা শুরু করবেন হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে। সঙ্গে থাকবে একটি অ্যাম্বুলেন্স। তাঁর সঙ্গে আরও অনেকেই থাকবেন।

তাঁরা ইচ্ছা করলে হেঁটে যেতে পারেন, আবার অ্যাম্বুলেন্সে করেও যেতে পারেন। অ্যাম্বুলেন্সটিকে পেছনে রেখে তিনি হাঁটবেন। হাঁটার সময় মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নেবেন। বিমল পালের ধারণা, দুপুরের আগেই তিনি ময়মনসিংহে এসে পৌঁছাতে পারবেন।

ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম জয় বাংলা চত্বর থেকে আরও অনেকেই তাঁর সঙ্গী হবেন বলে আশা। পরে সেখানে থেকে ময়মনসিংহ নগরের টাউন হল চত্বরে এসে হাঁটা শেষ করবেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ময়মনসিংহের স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে মিলে করোনায় মারা যাওয়া মানুষের লাশ দাফন ও সৎকারকাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ