ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

১০৩ টাকায় পুলিশের চাকরি পেলেন ৭৫ জন

প্রকাশনার সময়: ২৭ নভেম্বর ২০২১, ২১:৩৬

‘লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে আর মামা-খালুর জোর না থাকলে পুলিশে চাকরি পাওয়া যায় না! এমন কথা লোকমুখেই ছিল বেশ প্রচলিত।’ তবে এবারে তার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে টাঙ্গাইলে পুলিশ কনস্টেবল পদে ৭৫ জনের চাকরি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। তবে একেবারে বিনা পয়সায় নয়, সরকারি নির্ধারিত মাত্র ১০০ টাকা এবং এবং ভ্যাট ৩ টাকায় তাদের চাকরি দেয়া হলো। এদের মধ্যে ছেলে ৬৪ জন ও মেয়ে ১১ জন। যাচাই বাছাই শেষে শুক্রবার গভীর রাতে চূড়ান্ত ঘোষণাও দেওয়া হয়। রাতে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার লাইন্সে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। এসময় তাদেরকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

ফলাফল ঘোষণার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবেগ আল্পুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের পাছ ইরতা গ্রামের মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সামিয়া ইসরাত।

তিনি বলেন, আমার বাবা প্রায় ১০ বছর ধরে সবজির ব্যবসা করেন। ২ বছর যাবত অসুস্থ তিনি। ছোট ভাই বিপ্লব মাধ্যমিকে পড়াশুনা করে। বাড়িতে কেউ নেই কামাই করার, মা গৃহিণী। মায়ের কাজে সহযোগিতা করতাম সব সময়। গ্রামের সহবতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি শেষ করে টাঙ্গাইলের ’দ্য টাঙ্গাইল কলেজ’ থেকে মাধ্যমিক শেষ করে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেছি। এর মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশে লোক নিয়োগের খোঁজ পেয়ে যাই। পরে বাবার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে আবেদন করি।

তিনি বলেন, ‘এই চাকরিটা পেতে আমার কোনো প্রকার কারও কাছে তদবিরে যেতে হয়নি। কোনো টাকা লাগেনি। সরকারি নির্ধারিত টাকা খরচ হয়েছে। আজ চাকরিটা পেয়ে বুঝলাম পুলিশের চাকরি নিতে কোনো ঘুষ লাগে না। নিজের যোগ্যতা দিয়ে আজ আমি এ পর্যন্ত এসেছি। সবার কাছে দোয়া চাই আমি যেনো দেশের সেবা করতে পারি।’

গোপালপুর উপজেলার নারুচি গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের মেয়ে তানিয়া খাতুন বলেন,আমার বাবা কৃষি কাজ করে। আমি নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে লেখা পড়া করেছি। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতে পারেনি। অনেক কষ্টে লেখা পড়া করেছি। আমি ১০০ টাকায় চাকরি পাবো কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। আমি চাকরি পেয়ে আমার পরিবারের জন্য অনেক উপকার হয়েছে।এখন আমি পরিবারের পাশে দারাতে পারবো বাবাকে আর কষ্ট করতে হবে না।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই সুশাসনের কথা বলেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠা প্রতীক হিসেবে কোন প্রকার ঘুষ ছাড়াই তাদেরকে পুলিশের চাকরি দেয়া ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই তাদেরকে চাকরির জন্য মনোনিত করা হয়েছে। এ নিয়োগের মাধ্যমে তাদের মেধার প্রতিফলন ঘটেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন পুলিশে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। সেই চাওয়া পূরণেই টাঙ্গাইল পুলিশ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করেছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখতে চাই। পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ সব সময়ই জনগণের স্বার্থে কাজ করে। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত হওয়ায় তারা আগামীর দিনগুলিতে বিভিন্ন কর্মস্থলে দেশের সাধারণ নাগরিকদের পাশে থেকে সেবা প্রদান করবেন।’

এ সময় পুলিশ হেড কোয়ার্টারের এআইজি মো. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাছিনুজ্জামান, নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার, সদস্য গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম ও মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজান উদ্দিন এবং টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী নুসরাত এদীব লুনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শরফুদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ