সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের নেতা ইমন হত্যার ৪ বছর অতিক্রান্ত হলেও মামলার অগ্রগতি নেই। সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক শেখ হাসিবুল হাসান ইমনকে ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি রাতে হত্যা হয়।

এরমধ্যে ৫বার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করার সময় শেখ বখতিয়ার রহমান বিপ্লবকে, তার এক ঘণ্টা পর সুলতানপুর থেকে শেখ মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদকে এবং সুলতানপুর ক্লাব মাঠে জানাযা নামাজ আদায় করার সময় রেজাউল মোল্লা রনিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরদিন স্থানীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকায় এ ঘটনায় খবর প্রকাশ হয়।

ঘটনার ৪দিন পর স ম আলাউদ্দিন হত্যা মামলার আসামি একই গ্রামের কাজী সাইফুল ইসলামকে সদর থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। ঘটনার দেড় বছর পর নিহত শেখ হাসিবুল হাসান ইমনের চাচা মামলার বাদী শেখ আলমগীর হাসান আলমকে গ্রেফতারর পর মামলার ক্লু উদঘাটন হতে থাকে। বাদী আলমগীর ওরফে আলম আশাশুনি উপজেলার একটি হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা ও সন্ত্রাসী অপরাধে চিহ্নিত বলে জানায় এলাকাবাসি।

আলমগীর হাসান আলমের মোবাইল ফোন থেকে সিআইডি ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার পরপরই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার দু’জন এমপির সহায়তা পাওয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তি বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে বলে এলাকার মানুষের অভিমত।

পুলিশ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞজনের অভিমত, ইমন তার চাচার কাছে রাতে টাকা আনতে গিয়েছিল। তারপর থেকে ইমনকে আর পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয়ত, মামলার বাদী পিতা না হয়ে নিজেকে বাদী হিসেবে দাঁড় করানোর বিষয়টি সন্দেহ সৃষ্টি করে। তৃতীয়ত, ইমনের মৃতদেহ উদ্ধার করার সময় শেখ বখতিয়ার রহমান বিপ্লবকে সকাল সাড়ে দশটায় বাদী আলম ও অপর ভাইপো শাবাব কর্তৃক এসআই হুমায়ুন কবিরকে দেখিয়ে দিয়ে গ্রেফতার করানো, পরপরই মোস্তাফিজুর রহমান মুরাদকে গ্রেফতার করানোর ফলে সন্দেহের তীর আলমের দিকে যায়। চতুর্থত, লাশ ময়নাতদন্তের সময় সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বসুলপুরে এসআই হুমায়ুন কবিরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, দু’জনকে আটক করেছেন, খুনের কারণ কি জানা গেছে ? জবাবে দারোগা সকলের সামনে বলেছিলেন ভিকটিমের চাচার বলামতে দু’জনকে আটক করেছে। পঞ্চমত: বাদী শেখ আলমগীর হাসান আলম রাত দশটার পর সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে, অথচ মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করেনি। মামলা দায়ের করার এগারো ঘণ্টা আগে দু’জন এবং চার ঘণ্টা আগে একজনকে গ্রেফতার করতে বলেছিলেন পুলিশকে। ইমনের ছোট ভাই রিমন বিপ্লবকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ করলে আলম ধমক দিয়ে বলেছিল ‘তুই কিছু জানিস না, তুই এর ভিতর কথা বলিস না।’

ষষ্ঠত: তৎকালীন সময়ের ওসি ফিরোজ মোল্লা প্রভাবিত অথবা প্ররোচিত হয়ে তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়েছিলেন মামলা রুজু হওয়ার পর। অথচ সাংবাদিকদের সাথে আসামি গ্রেফতার করার তথ্য অকপটে স্বীকার করেছেন। পরদিন সেমর্মে খবর প্রকাশ পেয়েছিল। সপ্তমত, কাজী সাইফুল ইসলাম আলমগীর হাসান আলমকে স্থানীয় সবজি রেস্টুরেন্টে বলেছিল, এই আলম শোন, তোর ভাইপো মার্ডার হলো, তুই এত চুপচাপ কেন? তোর মতিগতি তো ভালো ঠেকছে না!’ এরপর কাজী সাইফুল ইসলাম আলমগীরকে আরও বলেছিল, দেখ আলম, খুনি সব থেকে বড় ভুল করেছে কি জানিস ? ইমনের লাশ আমার ঘেরের ওখানে গিয়ে ফেলেছে। এটাই ওদের কাল হয়ে যাবে। আমি এমনই মানুষ, হায়েনার মতো গন্ধ শুকে শুকে ঠিক বের করে ফেলবো-খুনী কারা।’

আলমকে যেদিন বললাম, সেদিন রাতেই পুলিশ আমাকে ওই মামলার আসামি করে গ্রেফতার করলো।

শেখ হাসিবুল হাসান ইমনের জানাযা নামাজ আদায় করার সময়ে সুলতানপুর ক্লাব মাঠে অনেকেই বক্তব্য দিয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ছাত্রলীগ নেতা ইমন খুবই ভালো ছেলে। যে বা যারা এমন নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

আগামী বছর ২৪ জানুয়ারি ইমন হত্যা মামলার ধার্য দিন। ১৭ জানুয়ারি রাতে হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পার হবে। হত্যা মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে সাতক্ষীরা সিআইডি এএসপি কাজী দাউদ হোসেন সাংবাদিককে জানান, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি মামলাটি প্রথমাবস্থাতেই জটিল ও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তারপরও চেষ্টায় আছি, দেখা যাক, কতদূর কি করা যায়।

শেখ হাসিবুল হাসান ইমন হত্যার সাথে জড়িত যেই হোক তার ফাঁসির আদেশ দেখে যেতে চায় ইমনের বাবা-মাসহ এলাকাবাসী। চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড হিসেবে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ইমনের পরিজনেরা।

নয়া শতাব্দী/জেআই